লিলু(পর্ব : ৬)

 


প্রিয় লিলু,

আমার হতাশার রঙের নামের নারী, আমার একক একাকীত্বের সঙ্গিনী। তোমাকে দেখিনা আজ বহু বছর হতে চললো। কোথায় যেন শুনেছিলাম নারীর রূপ আত্মার রঙের থেকেও উজ্জ্বল হয়! আমি তোমার মখমলের মতো ত্বক আর সঙ্গমের স্মৃতি ভুলে গেছি। মনে আছে শুধু, তোমার সেই সব অনাকাঙ্ক্ষিত অবহেলাদের মাঝে, আমাকে রঙিন করে তোলা স্মৃতিদের। 

আমি এখন আগাগোড়া পাগল কিসিমের মানুষ। হাত পেতে খাই। কোথাও মেলে আবার মেলেও না। তুমি মনে করো না আবার, আমি পেট ভরতে ভিক্ষা করি। আমি, আমি আসলে নারীর মাংসের পাগল হয়ে উঠেছি। আমি ছুটে যাই তাদের কাছে, মুখ গুজে পড়ে থাকি তাদের মাংসের গন্ধে, কোথাও তোমার মাংসের অথবা পারফিউমের গন্ধ ভেসে বেড়ায় না। আমি, আমি আসলে ভালোবাসি।আমি ভালোবাসা বলতে এক এবং একমাত্র নারীকেই বুঝি। তোমাকে পাবো না, সে কি করে ভাবতে পারি আমি? 

আমার বাবা অথবা মাকে হারানোর পর, আমি তোমাকে পেয়েছিলাম। তোমাকে হারানোর পর, আমি জানতে চেয়েছিলাম মানুষ বেঁচে থাকে কি জন্য? আমি জানি এখন, আমি জানি মানুষ বেঁচে থাকে লোভে, ভালো দিন ফিরবে! ঈশ্বর আদতে একজন আমার মতোই পাগল কিসিমের স্রষ্ঠা। তাই আমি বিশ্বাস করি, হুট করে একদিন তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে যাবে এবং জানতে চাইবে, ঘুমের ঘোরে আজও তোমাকে নিয়ে চিৎকার করি কিনা!

প্রিয় লিলু,

আমার, আমার এক আকাশ সমান আমিটা বেঁচে আছে তোমার ভেতর? সেই সব পুরোনো স্মৃতি, তোমার ঠোঁট বেয়ে হাতের আঙ্গুল! পৌরাণিক দেবতারা যদি ধ্বংস হয়ে না যেত অথবা আমি নিজেই যদি তোমার দেবতা বলে দাঁড়িয়ে যেতাম! কি হত পৃথিবীর? 
আজ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ঢাকায় ফিরছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়ে গুলো, তোমার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। তাদের নেশা যেন, পৃথিবীর আদিম কোনো সভ্যতার রক্তের নেশা থেকে কম নয়।জানো, আমার মাঝে মাঝে মনে হয় গাঁজা অথবা নেশা জাতীয় দ্রব্য গুলো শত গুণে ভালো। সে একজন মানুষকে তিলে তিলে বটবৃক্ষর মত মেরে ফেলে, আর প্রেম! আহা প্রেম, আহা নারী! এরা দুজনই মারে অথবা তারও অধিক! আমি তাই বলে শাহবাগ অথবা জাহাঙ্গীর নগরের সামনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়াবো না যে,

"নেশাকে বৈধ করা হোক, আর প্রেমকে নিষিদ্ধ"।

আমি এতটাও পাগল হইনি। প্রেমকে ঘৃণা করার অর্থই তো হল তোমার অস্তিত্ব কে ঘৃণা করা অথবা ভুলে যাওয়া। না, আমি তা করবো না। তুমি নিশ্চিন্তে আমাদের সন্তানকে তার ভুল পিতার পরিচয়ের মাঝখানে ঘুম পাড়াও। 
আচ্ছা,লিলু আমার মেয়েটাকে যে তুমি ওই লোকটি আর তোমার মাঝখানে ঘুম পাড়াও, তোমার বুক কি একটুও ধক করে উঠে না? আমার মেয়েটা অবাধ্য ছিল তাই না লিলু? যদিও তুমি কখনো ধর্ম মানোনি, তাই ভুল পিতার পরিচয়ে তাকে বড় করে তুলছো।
তুমি ঘুমাও কি করে? সত্যি করে বলবে? তুমি কি করে ঘুমাও? আমি তো পারিনা, আমি পারিনা। আমি ভাবতে থাকি, আমার ঈশ্বর,ভগবান অথবা আল্লাহ তারা তো জানেন, আমার মেয়েটা অবাধ্য। যদিও আমি ইসলাম ধর্মের নীতিতে বিশ্বাসী। মাঝে মাঝে ঈশ্বরকে দু একটা গালি দেই, তাতে কার কি এসে যায়? দু্র্বল মানষের অধিকার আছে অন্যকে গালি দিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার।



প্রিয় লিলু,

আমার, আমার একাকীত্বের স্বপ্নময়ী নারী।আমার আরাধ্য দেবী, আমাকে সাজাও তোমার মতো। তোমার ত্বক, তোমার পাতলা ঠোঁট, তোমার শাড়ির আঁচল আর আমার উলঙ্গ দেহ নিথর হয়ে পড়ে আছে, বিশাল ঘাসের সমাহারের আড়ালে। শুধু চাঁদটাই দেখা যায়, তুমি কোথায়? এটা কি আমার ভ্রম ছিল? তুমি নেই। আমি তৃপ্তি সহকারে সঙ্গম করার পর আবিষ্কার করলাম, আমি খোলা মাঠে একা দাঁড়িয়ে আছি! 
ভালো থেকো লিলু, তোমার চিন্তায় আমি পাগল হতে চলেছি। জানি না, কবে যেন এই চিঠি লেখা থেমে যায়। ভালো থেকো। পারলে আমাকে বাঁচিয়ে রেখো, তোমার উজ্জ্বল আত্মার গোলাম করে।



-নরকীট

Post a Comment

0 Comments