লিলু(পর্ব: ৭)

 পর্ব: ৭



প্রিয় লিলু,

তোমাকে বলার আছে বা ছিল, এমন অনেক কথাই বলা হয়ে উঠে না। আজকেও একটা বিষাদময় রাত কেটে যাচ্ছে। অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখে, জেগে উঠে আমি পাশে গ্রীক অথবা ল্যাটিনা নারীকে জড়িয়ে ধরার, আফসোস নিয়ে হাঁসফাঁস করি এবং আবার ঘুমিয়ে যাই। আমার বিষাদ ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত গ্রাম হতে শহর, তারপর দেশ ছেড়ে গ্রহনক্ষত্রের অলিতে গলিতে। মাঝে মাঝে চার পাঁচ দিনের পঁচে যাওয়া লাশের গন্ধ নাকে এসে লাগে এবং আমিই আবিষ্কার করি শহরটি মৃত।


যে মানুষকে ভালোবেসে তুমি স্তন দান করে ছিলে, সেই একই মানুষের মৃত্যুতে তোমার গায়ে কাঁটা দেয় না? আমি আগাগোড়া একটা কবর আর আত্মাদের বহন করে ঘুরে ফিরছি সমস্ত দেশে। তাতেও তোমার ঘুমের বুঝি ব্যাঘাত ঘটে না? 



জানো লিলু,

গত কালকে হাইওয়ের থেকে চার পাঁচ মিনিটের দূরত্বে, একটা লাশ পঁচে এমন গন্ধ ছড়ালো যে, আমার ঘুমটাই হল না ধান ক্ষেতের পাশে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে সেই বেওয়ারিশ লাশ আমাকে স্পর্শ করেনি। তবে হ্যাঁ আমি অবাক হলাম একটা বিষয়ে " আমি তো কবেই মরে গেছি! সে গন্ধ এত দিনে সমস্ত পৃথিবী জেনে যাবার কথা, কিন্তু একটা কাক পক্ষীও টের পায়নি"।


যদিও পুলিশ আমাকে কয়েকবার থানাতে নিয়ে গিয়েছিল জবানবন্দি দেওয়ার জন্য। কয়েকজন তো বললো, "পেছন দিয়া গরম ডিম দেন দেখবেন হরহর করে কথা বের হয়ে যাবে"। যদিও তাতে আমার ভয় ছিল না। তবে এক বিষয় দারুন লেগেছে, থানায় যে কয়দিন গিয়েছিলাম, ভালোমন্দ কিছু খেতে পেরেছিলাম। ইয়ে মানে চা রুটি আর কি! হাসবে না খবরদার! এখন হাত পাতা ছাড়া এক কাপ চাও আমার জন্য সম্মানের বিষয়, যদিও পুলিশের বিষয়টা আলাদা। তবে আমি বিষয়টা ইতিবাচক ভাবেই দেখেছি। 


প্রিয় লিলু,

আমাকে আসলে কঠিন মারা হয়েছিল ওইদিন, যদিও তোমাকে বলা হয়নি উপরে। মানুষের অনুভূতি যদি মারা যায়, তবে দেহের সেখানে কিছু করার থাকে না।"একটা বাগান আর লাশের ভেতর তফাৎ কি জানো? দুজনই সৌন্দর্য্য এবং পবিত্রতার প্রতীক"। 


আমার দেহটি হল কবর এবং আমি ধারণ করে আছি একটা পঁচা এবং দুর্গন্ধ যুক্ত আত্মাকে। যতদিন তুমি ছিলে সে পবিত্র ছিল। যদিও ধর্ম মতে তখন সে মৃত, কিন্তু আদতে প্রেম ঈশ্বরের ইন্দ্রিয় সজিবতারই বাহক। গত রাত্রে আত্মহত্যা করতে যখন গলায় দড়িটায় টান পড়ে, আমার মনে হল আমি ঘুম থেকে জেগে উঠেছি। আমার অর্জিত সব জ্ঞান আমাকে ধিক্কার দিচ্ছিল যে, আত্মহত্যার মত কষ্ট বুঝি তোমারই মতো! 

তুমি কখনো নিজেকে খুন করতে উদ্যোগ নিয়েছিলে লিলু? হুম নিতেও পারো, আমাকে হারানো তো আর ছেলেখেলা নয়। আমি সেই লৌহযুগের থেকে উঠে আসা প্রেমিক অথবা বলা যায় মধ্যযুগীয় বর্বর হত্যাকাণ্ডের একমাত্র লিপ্সাযুক্ত খুনী। আমাকে থানার ওসি ছেড়ে দিয়ে, একটা বিড়ি ধরিয়ে দিল, আহা শালায় আমাকে শেষে এসে ভালোই সম্মান দেখিয়েছিল। ভালো ব্র্যান্ডের একটা সিগারেট হাতে ধরিয়ে বলেছিল,

" শালা পাগলের ভং ছাড়, তোকে আমি চিনি।বাড়ি ফিরে যাবি না হয় প্রতিটা থানায় আমি তোর নামে জিডি করব"। 

মুখটা চেনা চেনা লাগছিল ওর, পরে আবিষ্কার করলাম ওই আমার একমাত্র বন্ধু নাবিদ ছিল। যখন আমি বের হতে যাব, ওর চোখ গুলো দারুন লেগেছিল। এই শালাই একটু আগে কি পরিমাণ অত্যাচারটাই না করল আমার উপর। এখন চোখে কারবালা!  শেষে চিৎকার করে বলল,"লিলুর শোকে ভন্ড হয়ে গেছিস তুই। আমাকেও তো ভালোবাসতে পারতি"! আহা বন্ধু বুঝি এমনই হয়? 


লিলু,

আমার আগাগোড়া প্রেমিকা তুমি। আমাকে জড়িয়ে ধরো তোমার ত্বকের গভীরে, কোথাও লুকিয়ে রাখো অথবা তোমার গভীর মখমলের মতো শরীরের কোনো অঙ্গ ভেবে মায়া করো।


আমার বন্ধুটি আমাকে ভালোবাসতো। আমার মা এবং আমার বাবার কথা বলা হয়নি তোমাকে। আমার বন্ধুটি আমাকে বড্ড ভালোবাসতো। প্রেম এবং ভালোবাসা নারী কেন্দ্রীক হতে পারে না। প্রেম এবং ভালোবাসা শরীর কেন্দ্রীক হয় না, মাঝে মাঝে তা চোখের ভাষা পড়ার জন্যও জন্মায়। আমার, আমার বন্ধুটির চোখে আমি তা দেখেছি। এখন যে আমি আরও বড্ড বেশি পাগল হয়ে উঠব অথবা হারিয়ে যাওয়া ভন্ড কোনো মানুষ রূপি জানোয়ার!  


লিলু, তোমাকে বড্ড প্রয়োজন। একজন মানুষ দরকার। জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে না পারি, অন্তত মনের কষ্ট গুলো তো স্পর্শ করার মানুষটি চাই! আমার সেই অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে জন্মের সাথে সাথে। তাই বাবার জন্য জমানো কোনো গল্প নেই, আছে মা এবং তুমি। অবশ্য নাবিদও থাকার কথা ছিল সেই তালিকায়।


লিলু, আমার একমাত্র নারী অথবা সেই রুপবতী, যাকে আমি নারীর বিদ্রোহ করা অভিশাপ লিলিত নামে ডাকি ! আমাকে ভালোবাসতে শেখো, আমাকে ডাকতে শেখো দেবতার মতো অথবা তোমার কাঙ্ক্ষিত কোনো আরাধ্য বস্তু! নয়তো আমি পরের জন্মে তোমার অভিশাপ হয়ে জন্মাবো। মনে রেখো, আমি পরের জন্মে তোমার অভিশাপ হবো।


- নরকীট

Post a Comment

0 Comments