গান পর্যালোচনা
গানের নাম: ক্রুসেডব্যান্ড দল: মেঘদল
অ্যালবাম: মেঘদল
প্রকাশকাল: ২০০৫
দৈর্ঘ্য: ৬মিনিট ৫৯ সেকেন্ড
ঘরানা: মেলোডি/সাইকেডেলিক
সদস্যরা:-
শিবু কুমার শীল : ভোকাল এবং লিরিক্স
মেজবাউর রহমান সুমন : ভোকাল এবং লিরিক্স
বেস: এম জি কিবরিয়া
গিটার: রাশেদ শরীফ শোয়াব
আমজাদ হোসেইন: ড্রামস
তানবির দেওয়ান রনি: কিবোর্ডিস্ট
ফ্লুট: সৌরভ সরকার
প্লট:-
বাংলাদেশের ব্যান্ড জগৎ নিয়ে যারাই লেখালিখি করেন পেপার পত্রিকায়, আমার ধারণা তারা ক্ষুধার্ত তাই পেট চালাতে যতটুকু দরকার ততটুকুই করেন। তাদের দরকার বড় বড় ব্যান্ডদল, যাদের নিয়ে লিখলে প্রচুর মার্কেট পাওয়া যাবে। মেঘদল আজ ১৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের ছোট বলা যাবে না কিন্তু আন্ডাররেটেড একটা ব্যান্ড দল। যারা অন্য সব ব্যান্ড দলের মতোই দারুন সৃজনশীল কাজ করে যাচ্ছে তবুও তাদের নিয়ে আলোচনাটা সে রকম নেই। তাহলে আমাদের (ব্যান্ড দলের) কি করা দরকার? একটা নিজস্ব ব্লগ খোলেন,ডোমেন কিনতে আর কত লাগে? হাজার হাজার টাকা তো অ্যালবাম আর গিটারের পেছনে যাচ্ছে সেখানে এই গুলো কিছু না বা একটা সাইট খোলেন। যেখানে আপনাদের নিজস্ব সব আপডেট থাকবে। মানুষ আপনাদের প্রতি আগ্রহ দেখালে তারা যেন সহজেই হাতের কাছে সব পায়।
ক্রুসেড নামের গানের পেছনের গল্পটা বা আপনাদের অনুপ্রেরণার পেছনের গল্প টা তো মানুষ জানতে চাইবে। কোথায় পাবে এই সব? অনেক খুঁজেও ২০০৫ এর লাইন আপ পাচ্ছি না। তাই নিজেদের সম্পত্তি নিজেদেরই আগলে রাখতে হবে,জানি না কেন সব কয়টা ব্যান্ড দলই এমন।যে তাদের সব কিছু মানুষ মনে রাখবে, তাদের প্রয়োজন নেই কিছুর।
যাই হোক এখন গান নিয়ে কথা বলি।
ক্রুসেড দের আমরা সবাই জানি,এরা সেই ধর্মযোদ্ধা যারা জেরুজালেম কে ফিরিয়ে দিতে খিষ্ট্রানরা হাজার হাজার মুসলিসদের গলা কেটেছিল। এরা এই ক্রুসেড যারা ধর্মের নামে বিশাল ব্যবসায়ী সাম্রাজ্য গড়ে তুলে ছিল মধ্যপ্রাচ্যের সীমান্ত জুড়ে।
গানের নামটা কেন ক্রুসেড রাখা তার তথ্য যদিও আমি খুঁজে পাচ্ছি না কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বা ধর্মীয় যুদ্ধ নিয়েই লেখা এই গান। যা শুরু করেছিল ক্রুসেডরা সেই ১০০০ সালের দিকে, তা এখনো থামেনি। উল্টো তা যেন মহামারী আকারে বেড়ে গেছে রাজনীতির মারপ্যাঁচে। মানুষ হত্যাকে ক্রুসেডের সাথে তুলনা করেই এই গানের নাম করা, যা আমার মতে শত ভাগ যুক্তি সঙ্গত।
লিরিক্সের ব্যাখ্যা:-
"মানুষের ক’জন ভগবান?ক’জনে ভাগ্য লিখেন,
ক’জন জীবন সামলান?"
এখানে সুন্দর ভাবেই ভগবান বলেন আর ঈশ্বর বলেন, সেটাকেই ব্যঙ্গ করে হতে পারে। আমি সঠিক তা বলছি না,যখন গানটা আমি শুনি তখন সেটাই মনে হয়। আমাদের অনেকেই আছে,যারা ভাগ্যকে বদলানোর চেষ্টা না করে ভগবান/ঈশ্বরকে দোষারোপ করে থাকি। যা আসলেই প্রশ্নবোধক একটা চাহিদা। আমরা কখনো ঈশ্বরের উপর ঐরকম দোষ চাপাতে পারি না। যারাই সমস্যায় পড়ি একবাক্যেই সেটা বলি " ঈশ্বর কপালে যা রাখছেন" আদতে কি ব্যাপারটা এমন? নাকি আমরা যে কর্ম করি তার ফলই ভোগ করি? ঠিক সেই ব্যাপারটাকেই স্পর্শ করতে চেয়েছে ব্যান্ড দলটি। তারা বোঝাতে চেয়েছেন,কত জন ভগবান মিলে আমাদের ভাগ্য বদলান বা আমাদের জীবন সামলান। যেখানে প্রতিটা ধর্মেই বলা আছে,নিজেকে রক্ষা করো এবং কর্ম করো তবে তোমার ভাগ্য নিজেই বদলাবে। এখানে ঈশ্বর /ভগবান কিছুই করবেন না।
আমার কাছে আরেকটা জিনিস মনে হয়,তারা আসলে আমাদের রাজনীতির/ ক্ষমতাধর রাষ্ট্র গুলোকে বোঝাতে চেয়েছেন। যারা চাইলেই কোটি মানুষ হত্যা করতে পারে বিনা নোটিশে। যা আমাদের ঈশ্বর করতে গেলেও অন্তত হাত কাঁপার কথা। তিনি কখনো তিনার সৃষ্টিকে এমন অসহায়ের মতো মারবেন না। যা করছে বড় রাষ্ট্র /ক্ষমতাধর রাষ্ট্র গুলো। যা ইনডিরেক্টলি তাদেরই ইঙ্গিত করেছে ব্যান্ড দলটি হয়তো। আমি আবারও বলি,আমার একান্ত ধারণা এই থিওরি গুলো।
"আকাশে উড়ছে বোমারু ভগবান,
মানুষ ঝলসে যিনি গণতন্ত্র এনে দেন।"
এমন একটা যুদ্ধ দেখান যেখানে বোমার ব্যবহার হয়নি। অর্জন হয়নি গণতন্ত্র খুব সহজে। যত গুলো রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে সব কয়টা রাষ্ট্রেরই ভগবান হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে বোমা। যে মানুষ ঝলসে ছিনিয়ে নিয়ে আসে গণতন্ত্র।
তাই এখানে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়,বোমাও এক প্রকার ভগবান। যে গণতন্ত্র কে প্রতিষ্ঠা করে এবং সাথে সাথে ঝলসে দেয় মানব দেহ।
"মাটিতে পুতে আছে ক্লাস্টার ফুল,
ছুঁয়ে দিলে জ্বলে ওঠে, সে তো শিশুদের ভুল।"
আমি তখন মনে হয় ক্লাস এইটে পড়ি,একটা নিউজ দেখেছিলাম এমন যে " একটা বাচ্চা ছেলে বল মনে করে বোম নিয়ে খেলতে গিয়েছিল যার ফলাফল সমস্ত বাড়ি শুদ্ধ উড়ে যাওয়া "
অনেক আগের নিউজ বাংলাদেশেই এটা হয়েছিল। এইবার একবার মধ্যপ্রাচ্যের কথা চিন্তা করেন। যেখানে হাজার হাজার বোমা ফেলা হচ্ছে এবং মানুষ হত্যা করছে। একবার ভাবুন, সেখানে কি পরিমাণ বোমা মাটির তলায় ব্লাস্ট হবার জন্যে ছাড়া আছে! কত পরিমাণ বোমা খেলার ছলে তুলতে কত শিশু মারা গেছে!
ক্লাস্টার অর্থ হল গুচ্ছ বা স্তবক। এখানে এই গুলো দিয়ে বোঝানো হয়েছে মাটিতে পুঁতে থাকা বোমার সমাহার যখনই এই সব তুলে নিয়ে আসে শিশুরা তখনই জ্বলে উঠে আর কেড়ে নিচ্ছে তাদের প্রাণ। ব্যান্ড দলটি তাই হয়তো তাদের রাগ প্রকাশে শিশুদের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছেন যেন নিজেদের বাঁচানো যায় দোষারোপ থেকে।
"দু’হাত হারিয়ে ডানা কাটা পরী আজ যে শিশু,
শুনতে কী পাও তার চিৎকার পশ্চিমা যীশু?"
সমস্ত ব্যাপারটাই মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধকে নিয়ে লেখা। যেখানে হাজার শিশুর বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হচ্ছে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। যে শিশুরা বাবা মায়ের কাছে পরী কিন্তু আসলে তাদের ডানা কাটা বলতে কি? সেটা কি তাদের শরীরের হাত নাকি তাদের বাবা মা? যাদের হারিয়ে তারা অসহায় এবং এতিম। তাদের চিৎকার আসলেই কি মার্কিনের যিশুরা শুনতে পায়? যারা ভাগ্য গড়ে দিচ্ছে তাদের যুদ্ধ গুলোয় আহত হওয়া মানুষের!
"পৃথিবী জুড়ে চলছে যখন প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ মিছিল,
পিশাচের হাতে, হাত মেলালেন ব্লেয়ার, জ্যাক শিরাক, ভ্লাদিমির পুতিন।"
এই ইরান যুদ্ধের গল্পে জ্যাক শিরাক কেন জানিনা,আমার জানা মতে সে ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান করেছিল। আমরা জানি বর্তমান ফ্রান্স হয়তো মুসলিম বিদ্বেষী কিন্তু ২০০৩ এর দিকে জ্যাক তার বিরুদ্ধে ছিল। সে আমেরিকার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল, ইরান যুদ্ধ যখন তারা শুরু করে। তবে হ্যাঁ ব্লেয়ার ছিল ব্রিটেনের প্রেসিডেন্ট সে যদিও খুব সুনামের সাথেই তার ক্ষমতা চালাচ্ছিলো বাট যখন ইরানের সাথে যুদ্ধের ঘোষনা আসে তখন সেও একমত হয়। যার ফলে তার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ পায় এবং সে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়।
পুতিন যদিও সেই ইরাক যুদ্ধে ছিল না বাট সে আরও কয়েকটা দেশে যুদ্ধ লাগিয়ে ছিল ইউক্রেনের একটা অংশ সে দখল করে । চেচনিয়ার এবং সিরিয়ার যুদ্ধের বা তার ক্ষমতার প্রাচুর্য দেখেই এখানে তাকে টানা হয়। মোট কথায় বলা যায় যুদ্ধ এবং আমেরিকা তাদের পেছনের গল্পের সাথে যুদ্ধ বা নিজেরাই নিজেদের অঞ্চলে যে যুদ্ধ ঘোষণা করে এই নেতারা, তাকেই ইঙ্গিত করে ব্যান্ড দলটি।
"ওরা রক্তের হিস্যা বুঝে নিতে চায় বুঝি গ্যালন গ্যালন!"
এখানে ঐসব ক্ষমতাধর রাষ্ট্র গুলোকে দানব হিসেবে দেখানো হয়েছে যারা যুদ্ধ লাগাতে এক পায়ে খাঁড়া থাকে সব সময়। তারা নিজেদের স্থানটা নিবেই তার বদলে যদি কোটি নিরীহ শিশুর প্রাণও যায় তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না।
বিঃদ্রঃ-
আমার রাজনীতির জ্ঞান খুবই কম। গানটা অনেক ভালো লেগেছে তাই চেষ্টা করেছি নিজের মতো করে লিখতে এবং ঐসব জিনিস সম্পর্কে জানতে। ভুল থাকতে পারে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থী।ধন্যবাদ।
0 Comments