গান পর্যালোচনা: নির্জন অভয়ারণ্য || মনোসরণি ||

গান পর্যালোচনা

গান: নির্জন অভয়ারণ্য
অ্যালবাম: মনোসরনি
ব্যান্ডদল: মনোসরনি
প্রকাশকাল: ২০১৪
ঘরানা: সাইকেডেলিক রক
সদস্য :
প্রবর রিপন -ভোকাল +গিটার
তাসবীহ প্রসূন -ভোকাল+গিটার
মুয়ীয মাহফুজ -বেস গিটার
বাঁধন - ড্রামস






আমি লিরিক্স নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করব। সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়, তবুও কয়েকটা দিক /সম্ভাবনা ময় যে দিক থাকবে সেটা নিয়েই কথা বলব। এই ব্যান্ডটির একটাই সমস্যা,এরা কি বলতে চায় তা ধরাটা অনেক কঠিন ব্যাপার। কারণ একটাই লিরিক্স, লেখক দুজনই কবি। আধুনিক কবিতায় এক সাথে অনেক ব্যাপার নিয়ে আসা যায় খুব সহজে। কথার মারপ্যাঁচ টা সহজে ধরা যায় না। প্রেম, রাজনীতি,বিদ্রোহ সবই সম্ভব এক সাথে বলে যাওয়া। এখন সেটাই যদি একজন কবি নিজের গলায় গায় এবং সেই গান নিয়ে কেউ ভাবতে যায়, তবে সেটা খুব সহজ না। যাই হোক চলুন তবে ঘুরে আসি মনোসরনির জগৎটা থেকে।
এই অ্যালবামের দুটা গানই আমার প্রিয়
" নির্জন অভয়ারণ্য " এবং " সুর্দশন রোবট" কিন্তু আমি লিখব 'নির্জন অভয়ারণ্য' নিয়ে। গানটা কেনো যেন বার বার আমাকে টানে। একাকীত্ব আবার অন্য দিকে দর্শন, রাজনীতি এবং প্রেম। জানি না কতটা আমি বুঝতে পেরেছি বা কতটা ব্যর্থতায় থাকব আমি।

"আমি আর এক মাকড়সা এই ঘরে থাকি
দু'জনে মিলে স্বপ্নের জাল বুনে যাই
দেহের গুহায় ওড়ে মায়ার পাখি
চোখের দেয়ালে কাঁপে খাঁচার ছায়া"

একজন দার্শনিক বা লেখক বা ভাবুক ধরনের মানুষ। যার চিন্তা/ দর্শন কে মাকড়সা বলে বুঝিয়েছেন। মাকড়সা যেমন চার দিকে নিজের সৃষ্টি দিয়েই জাল বুনে, তেমনি একজন দার্শনিক নিজের ভাবনা নিজেই সৃষ্টি করে আটকে পড়েন। যখন সেটা শুধু তার মাথায় ঘুরে ফিরে, কিন্তু সমাজ বদলানোর কাজে আসে না।
তারা দুজনই তখন মানে লেখক এবং ভাবনা মিলে এক অন্য জগতে বসবাস করেন।
দেহতত্ত্ব যেখানে বোঝানো হয়েছে বাকি দুটো লাইন দিয়ে।

"সারারাত শিয়রে জ্বলে মোমের আগুন
গলে গলে জড়ো হই আবার পোড়ার আশায়
স্বপ্নের আকাশে ওড়ে জাতিস্মর শকুন
মায়ার পৃথিবীর তন্তু ছেড়ে হৃদয়ের আভায়"


চিন্তারা সারা রাত্রি নিজেকে জাগিয়ে রাখে,তারপর আবার নতুন চিন্তা এবং নিজেকেই সেই চিন্তায় ধ্বংস করি আমরা।
আবার প্রেমিকা ও হতে পারে বা দার্শনিকের ব্যর্থ চিন্তারাও হতে পারে।
"জাতিস্মর" দ্বারা বোঝানো হয়
"আগের জন্মের কথা মনে রাখতে পারে যারা" এই যে ব্যর্থতার স্মৃতিরা, এরা শকুনের মতো বার বার হানা দেয় আমাদের। আনন্দের পৃথিবীর থেকে সরে দাঁড়ানো কে বোঝাতে চেয়েছে লাইনটি। যেখানে বলা হয় দার্শনিক নিজের চিন্তায় এতই মগ্ন যে, এই পৃথিবীর কিছুই তাকে স্পর্শ করে না।

"আকাশের পরিত্রাণ সে তো নীলের নির্জনে
কালোছড়ি হাতে অন্ধরা হাঁটে মহাকালের চোরাপথে"


এখানে এতটা স্পষ্ট নই লাইনটা নিয়ে, এমন হয়তো বোঝাতে চেয়েছে,আকাশের মতো বিশাল কিছুতে যদি হারানো যেত, যা আমাদের শূণ্যতাকে বিলীন করতে পারে।
কালোছড়ি বলতে বুঝাতে চেয়েছেন, অন্ধকারে সেই লোকটি যার অন্ধকার দিকটি তার নিজের অজান্তে ছুটতে থাকে।

"চোখের উপর সূর্যের আলো যেন বর্শার ফলক
আঁধারেই থাকি দেখে দেখে তারার পতন
গুহার দেয়ালে কাঁদে রূপের নোলক
প্রতারক আয়না তাকে করে না হায় আপন"


এখানে লেখক/দার্শনিক তার নিজের ভাবনা নিয়ে ঘর বন্দী । নিজের অজান্তে হয়তো চিন্তারা সব হারিয়ে যায়। নয়তো সেই দার্শনিক এর ভাবনাদের প্রকাশ করার আগেই তার পতন হয়।
সে নিজেকে খুঁজতে থাকে বার বার, কিন্তু নিজের ভেতর পরিবর্তন এর জন্য নিজেকে খুঁজে পায় না। অথবা এমনও হতে পারে,
সূর্যের আলোটা হয়তো সৎ মনুষ্যত্ব এর ভালো দিকটার তেজের মত, যা প্রতারক দের চোখে সহ্য হয় না। কাঁটার মত বিঁধে।
তারার পতন মানে সমাজের ভালো দিক বা মনুষ্যত্ব এর ভালো দিকটার পতন দেখতে দেখতে ওমন আঁধারে থাকতেই অভ্যস্ত।
রূপের নোলক হতে পারে মানুষের ভেতরে যে সুন্দর দিকটা থাকে সেটাই, যা ওই খারাপের বদ্ধতার আবদ্ধতা থেকে বেরোতে চায় কিন্তু পারে না। তাই কাঁদে।
মানুষের অন্তরের কিছু ভালো দিক থাকে যেটা তে পাপ ছুঁতে পারে না কখনো।

"কেউ আসে না কাউকে নিমন্ত্রণ করিনি
গভীর রাতে আসে শুধু কোন পুরাণকালের মানবী
নির্জনতা করে না প্রতারণা যা করেছ তোমরা
আঁধারে আলোর জাল বোনে চাঁদ গভীরে খুব একাকী"


এটার মানে হতে পারে,এই যে ভালো খারাপের দ্বন্দ্ব এটার সঙ্গে লড়তে লড়তে সে হয়তো এখন একাকিত্বে থাকতে চায় সব কিছুর থেকে পালিয়ে। পুরানকালের মানবী বলতে তার ভালো স্মৃতির কথাও হতে পারে। এটা ঠিক পরিষ্কার নয় আমার কাছে।এই একাকিত্ব প্রতারণা করে না।পায়ে শেকল পড়ায় না।
নিজের ভেতরের অন্ধকারের জগতেও এই একাকীত্বের সময় সে জাল বোনে সোনালি দিনের।

আমার বিশ্লেষন নিয়ে মতভেদ থাকা স্বাভাবিক।আমার কাছে গানটি এভাবেই ধরা দিয়েছে।আপনাদের মতামত কেও স্বাগতম।

তাহলে শুনে নিন গানটি, মাষ্টারপিস গান এটি একটি।
ধন্যবাদ।




-নরকীট

Post a Comment

0 Comments