Article: রোজার ইতিহাস এবং বিজ্ঞান

রোজার ইতিহাস এবং বিজ্ঞান 



"খাবারের উপাদান থেকে সারাবছর ধরে মানুষের শরীরে জমে থাকা কতিপয় বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন), চর্বি ও আবর্জনা থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র সহজ ও স্বাভাবিক উপায় হচ্ছে উপবাস। উপবাসের ফলে শরীরের অভ্যন্তরে দহনের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থসমূহ দগ্ধীভূত হয়ে যায়।” 

উপরোক্ত কথাটি ছিল একজন ডাক্তারের। অন্য ডাক্তারদের ভাষ্যও এমনই ছিল। রমজান এমন এক মাস,যা মুসলিমদের জন্য সোয়াব এবং আল্লাহর দীনের পথের জন্য সবচেয়ে উত্তম মাস। তেমনি মানুষের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য এক রকম চিকিৎসাও বটে।


রোজার ইতিহাস:-


রোজা পৃথিবীর প্রথম থেকেই চলে আসছে,হযরত আদম (সাঃ)এর সময় থেকেই চলে আসছে এই রোজা। 
"হে যারা ঈমান এনেছ তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা তাক্ওয়া অবলম্বন করতে পার"। (সূরা বাকারা: ১৮৩)
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়,রোজা যে অনেক আগে থেকেই চালু ছিল।
হযরত আদম সাঃ নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার ফল স্বরূপ ৩০ দিন পযর্ন্ত ওনার কোনো তওবা কবুল হয়নি। তারপর ওনার সন্তানদের উপর ত্রিশ রোজা ছিল।
হযরত ইব্রাহিম (সাঃ) এর সময় ও ৩০ টি রোজা ছিল এবং আল্লাহর কাছে সব থেকে প্রিয় রোজা রাখতেন হযরত দাউদ (সাঃ) তিনি সারা জীবন একই ভাবে রোজা পালন করতেন।
তিনি একদিন রোজা থাকতেন তারপর দিন বিনা রোজায় থাকতেন। বলা যায় বছরে ৬ মাস রোজা থাকতেন তিনি।
ইহুদিরাও রোজা রাখত। রোজা প্রতিটা জাতির উপরই ফরজ ছিল। 

ইসলামে রোজা এবং ইতিহাস:-





ইসলাম ধর্মের ৫টি স্তম্ভের ভেতর অন্যতম একটি হল রোজা। রোজা হচ্ছে ইসলামের প্রতিটি নারী পুরুষের উপর ফরজ। যা অবশ্যই পালনীয়। 
"রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)"
এই রমজান মাস এবং রোজা এই দুটিই আমাদের জন্য মহৎ। এই মাসেই আমাদের জীবন বিধান আমাদের কাছে নাজিল হয়। 
"সে-কারণেই নাজিল হয়— গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে। যে-ব্যক্তি খুশীর সঙ্গে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি রোজা রাখো, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পারো। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৪)"
প্রথম কিছু দিন রোজা ছিল কয়েকদিনের জন্য। যেন ইসলামের ছায়ার নিচে যে সব মানুষ আশ্রয় নেয় তারা যেন কঠিন না মনে করে। যখন সবার ভেতর ইমান এবং ইবাদত ঠিক মত পালনীয় হল,তখনই রমজান মাস জুড়ে রোজা শুরু হল। কতটা দয়ালু আমাদের আল্লাহ। কত সহজ করে বান্দাদের জন্য ধর্ম দীন দিয়েছেন। 

রমজান শব্দটি আরবী রুট রামিয়া বা আর-রামম থেকে উদ্ভূত যার অর্থ "তাপমাত্রা," বা "শুষ্কতা"যার মানে দাঁড়ায় জ্বালিয়ে দেওয়া। আমাদের শরীরের যে চর্বি বা অন্যান্য বিষাক্ত বর্জ্য থাকে তা জ্বালিয়ে দেয়।
বাংলাদেশে আমরা যাকে বলি রোজা,রমজান মাস।
ইসলামী বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে তা নবম মাস, যে মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলিমগণ রোজা পালন করে থাকে। সেই মাসটি ২৯/৩০ দিনেরও হয়ে থাকে। ২৯/৩০ দিন পর মুসলিমরা ঈদের চাঁদ দেখে রোজা রাখা বন্ধ করে এবং আনন্দ করে ঈদ উদযাপন করে। 

রমজানের ফযিলত এবং পালনের নিয়ম:-



রমজান মাসের রোযাকে তিনটা ভাগে ভাগ করা যায়।

১.রহমতের অংশ:
এই দশ দিন আল্লাহর রহমত পাওয়ার সময়,এই দশ দিনের রোযায় মানুষ আল্লাহর থেকে রহমত কামনা করেন এবং আল্লাহতালা তা মানুষের নিয়ত এবং রোযার ফযিলতের উপর কবুল করে থাকেন।

২. মাগফিরাতের অংশ :
এই মধ্য দশদিন হল ক্ষমার দিন।এই সময় আমাদের ক্ষমা করা হয়,আল্লাহর কাছে রোযা থেকে ক্ষমা চাওয়ার ফলে আল্লাহ তা কবুল করেন। যদি সত্যিই রোযাটি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়,তবে এই দশদিনের একদিনেই আমাদের মুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এবং শেষ অংশ
৩.দোযখ হতে মুক্তির অংশ:
এই শেষ ১০ দিন আল্লাহতালা আমাদের দোযখ হতে মুক্তি দান করেন। উপরের দুটা জিনিস যখন আমরা অর্জন করি তখনই আমাদের এই দোযখ থেকে মুক্তির অংশটুকু কবুল হয়ে যায়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন। আমিন।
রোযা সবার উপর আবার ফরজ না এবং আবার সহজে মুক্তি না।

এই সময় কুরআন পড়া এবং নামাজ আদায় করতে হবে। আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে এবং নিজেদের যাবতীয় কাজ কর্মও করে যেতে হবে। এমন না যে রোযা আছি বলে ঘরে বসে থেকে শুয়ে কাটিয়ে দিব। যত ধরনের অশ্লীল কাজ কর্ম আছে তা থেকেও দূরে থাকতে হবে। চোখ,মুখ এবং কানের হেফাজত করতে হবে। 
এ মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ব্যক্তির উপর সাওম পালন ফরয, কিন্তু অসুস্থ, গর্ভবতী, ডায়বেটিক রোগী, ঋতুবতী নারীদের ক্ষেত্রে তা শিথিল করা হয়েছে। রোজা বা সাওম হল সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা গুনাহের কাজ এবং (স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে) যৌনসংগম থেকে বিরত থাকা। এ মাসে মুসলিমগণ অধিক ইবাদত করে থাকেন। কারণ অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসের লাইলাতুল কদর নামক রাতে কুরআন নাযিল হয়েছিল, যে রাতকে আল্লাহ তাআলা কুরআনে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলেছেন। এ রাতে ইবাদত করলে হাজার মাসের ইবাদতের থেকেও অধিক সওয়াব পাওয়া যায়।

বিজ্ঞান এবং রোজা :-




মুসলিম ধর্মটি এমন এক ধর্ম যাকে আল্লাহ নিজেই মনোনীত করেছেন। তাহলে সে ধর্ম কেমন করে বিজ্ঞান সম্মত হবে না? চলুন তবে দেখি বিজ্ঞান কি বলে এই রমজান মাস এবং আমাদের রোজা নিয়ে?
তোমরা যদি রোজা রাখ তবে তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য কল্যাণ, তোমরা যদি সেটা উপলব্ধি করতে পার।’’ (সূরা বাকারাহ- ১৮৪)
এখানেই আল্লাহতালা বলে দিয়েছেন, তোমাদের কল্যাণ যদি সেটা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো । রোজা যেমন ফরজ তেমনি বিজ্ঞানী ব্যাখ্যাও আছে অনেক।
ডক্টর ডিউই বলেছেন, ‘‘রোগজীর্ণ এবং রোগক্লিষ্ট মানুষটির পাকস্থলী হতে খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেল, দেখবে রুগ্ন মানুষটি উপবাস থাকছে না, সত্যিকাররূপে উপবাস থাকছে রোগটি।’’
এমন অনেক ডাক্তারই বলে গেছেন, যেমন বলেছেন ডা. আলেক্স হেইগ, ‘‘রোজা হতে মানুষের মানসিক শক্তি এবং বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয়। স্মরণশক্তি বাড়ে, মনোসংযোগ ও যুক্তিশক্তি পরিবর্ধিত হয়। প্রীতি, ভালোবাসা, সহানুভূতি, অতীন্দ্রিয় এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষ ঘটে। ঘ্রাণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি প্রভৃতি বেড়ে যায়। এটা খাদ্যে অরুচি ও অনিচ্ছা দূর করে। রোজা শরীরের রক্তের প্রধান পরিশোধক। রক্তের পরিশোধন এবং বিশুদ্ধি সাধন দ্বারা দেহ প্রকৃতপক্ষে জীবনীশক্তি লাভ করে। যারা রুগ্ন তাদেরকেও আমি রোজা পালন করতে বলি।’’
উপরোক্ত ব্যক্তিদের থেকে আমরা জানতে পারি আসলে রোযার সাথে আধুনিক বিজ্ঞান কতটা সুফল বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যা গত কিছু বছর আগে অনুভব করতে পেরেছে তারা, তাই আমরা করে আসছি গত ১৪ শ বছরের ও বেশি সময় ধরে।

-রেজাউল করিম

Post a Comment

0 Comments