২৭ ক্লাব এক মহাকালের ধ্বংসস্তুপ
সাইকুডেলিক রক মিউজিক অথবা রক মিউজিক। বিশাল একটা সৃষ্টি, এদের ভেতর কিছু মানুষের নাম সামনে নিয়ে আসলে হয়তো সবাই বলবেন,আহা এরা যদি আর কিছু দিন বেঁচে থাকতেন,তবে হয়তো আমাদের আরও চির সবুজ গান দিয়ে যেতেন। জ্বী হ্যাঁ, সেই মানুষ গুলোর কথাই বলছি- জিম মরিসন,কার্ট কোবেইন, জিমি হেন্ড্রিরিক্স, ব্রায়ান জোন্স অথবা আমাদের মেকানিক্সের এর গিটারিস্ট জেহিন আহমেদ। জেহিন আহমেদের নামটা হয়তো সংযুক্ত হয়নি আন্তর্জাতিক ভাবে মানুষটার, কিন্তু আমরা যারা বাংলা ব্যান্ড জগতের খোঁজ রাখি তারা জানি জেহিন আহমেদ কি ছিলেন মেকানিক্স ব্যান্ডের গিটারিস্ট হিসেবে।
এই ক্লাবটা নজরে আসে যখন কার্ট কোবাইন সুইসাইড করেন।তার আগে অনেকেই এমন ২৭ বছরে মারা গেছেন। কিন্তু হুট করেই ব্যাপারটা সবার নজর আসে কার্ট কোবাইনের ২৭ বছর বয়সে মৃত্যুতে।
বিশেষত ব্যাপারটা চোখে পড়ার মত ছিল ১৯৬৯-৭১ এর ভেতর ।এই সময়ে মারা যান,ব্যান্ড মিউজিক অথবা সাইকুডেলিক রক /রক /ব্লুজ/আলট্রানেটিভ জগৎটায় কখনো রং হারাবেন না এমন সব বেষ্ট মানুষ।
ব্রায়ান জোন্স, অ্যালেন,জিমি হেন্ড্রিরিক্স,জানিস জোপ্লিন, অ্যালেস্টার এবং জিম মরিসন । এই তিন বছরে মারা যান বেষ্ট সব ব্যান্ড দলের ফ্রণ্ট ম্যান গুলো। যাঁরা তাদের ভোকাল অথবা গিটার অথবা বেজের যাদুতে সমস্ত পৃথিবীকে করে রেখেছিল মাতাল।
এখন আসল কারণ টা কি মৃত্যুর?এঁরা কি খুব সহজেই এমন করেছেন?অদ্ভুত ব্যাপারটা হল,কেউ কিন্তু যে খুব চাচ্ছে মরতে তা কিন্তু নয়। তারা সবাই হয়তো অতিরিক্ত হিরোইন/কোকেন নিয়ে অথবা এলকোহল এর সাথে অন্য কিছু মেশানোর বদঅভ্যাস থেকে মারা গেছেন। তবে সুইসাইডের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
পারিবারিক কলহ অথবা নিজের সাথে বোঝাপড়া করতে ব্যর্থ হয়েও অনেকে মারা গেছেন। কিন্তু তারপরও অনেক গুলো মৃত্যু ছিল যার কখনো সমাধান হয়নি। হয়তো তাদের মৃত্যুর পেছনে অন্য কোনো গল্প থাকতে পারে।আবার অনেকেই গাড়ি এক্সিডেন্ট করে বা অন্য কোনো এক্সিডেন্ট এ মারা গেছেন।
যত যাই হোক, তবে এই একটা ক্লাব সৃষ্টি হয়েছে যা মিউজিক অথবা যে কোন শিল্পীর জন্যই ভয়ংকর।
যে সব কয়জন ফ্রন্ট ম্যান ছিলেন সব কয়জনই মারা পড়তেন।অদ্ভুত হলেও সত্য, ব্যাপারটা আসলেই রহস্যময়।
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই ব্যাপারটা নিয়ে গবেষণা করলেও বিএমজি স্টাডি করে দেখেছেন যে" ২৫-৩২ বছর বয়সে মিউজিশিয়ান দের মৃত্যুর হার অনেক বেশি, যা শুধু ২৭ এই হয় তা নয়। ২৫-৩২ এই বয়সেই বেশি হার থাকে মিউজিশিয়ান দের মৃত্যুর"
Cobain and Hendrix biographer Charles R. Cross wrote, four years before the BMJ study was published, "The number of musicians who died at 27 is truly remarkable by any standard. humans die regularly at all ages, there is a statistical spike for musicians who die at 27."
২৭ ক্লাবটা আসলেই ভয়ংকর, যদিও সবাই চেষ্টা করেন যেন এই ক্লাবে মানুষ না ঢুকতে চায়,কিন্তু কিছু মানুষ আছেন,যারা মনে করেন এই ক্লাবটিই সেরা। তাই হয়তো প্রভাবিত হয়ে পড়েন। কিন্তু মনে রাখতে হবে এই ক্লাবটির থেকেও বড় কথা হল আপনার সৃষ্টি। বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবে এর কোনো ভ্যালু নেই, হয়তো কাকতালীয় ভাবে সৃষ্টি হয়ে গেছে তবুও ভবিষ্যতের জন্য এই ক্লাবটি ভয়ংকর হয়ে উঠবে।
যারা মারা গেছেন এমন সংখ্যাও অনেক। তাদের ভেতর আমি কিছু নামের তালিকা দিচ্ছি নিচে। সমস্ত নাম তো দিতে পারব না,তাহলে অনেক বড় হয়ে যাবে।
আলেক্সাণ্ডার লেভি ১৭ জানুয়ারি ১৮৯২
ন্যাট জাফি ৫ আগস্ট ১৯৪৫
রুডি লুইস ২০ মে ১৯৬৪
জো হেন্ডারসন ২৪ অক্টোবর ১৯৬৪
ম্যালকম হালে ৩১ অক্টোবর ১৯৬৮
ডিকি প্রাইভ ২৬ মার্চ ১৯৬৯
ব্রায়ান জোন্স ৩ জুলাই ১৯৬৯
জিমি হেন্ডরিক্স ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭০
জানিস জোপ্লিন ৪ অক্টোবর ১৯৭০
জিম মরিসন ৩ জুলাই ১৯৭১
রজার লি ডরহম ২৭ জুলাই ১৯৭৩
হেলমুট কোলেন ৩ মে ১৯৭৭
পিট ডি ফ্রেইতাস ১৪ জুন ১৯৮৩
কার্ট কোবেইন ৫ এপ্রিল ১৯৯৪
মাঙ্কি ব্ল্যাক ৩০ এপ্রিল ২০১৪
এই তালিকা করতে গেলে হয়তো ৪০ জনের উপর নাম পাব,যারা এই ২৭ ক্লাবের সদস্য। কিছু দিন আগেও যাঁরা মারা গেলেন,তাঁরাও হয়তো খুব হতাশা থেকেই এমন অতিরিক্ত মাদক সেবন করে থাকেন। যার ফলে দেখা দিচ্ছে এইসবের।
৭০-৮০ র দিকে পশ্চিমা বিশ্বে ড্রাগস এবং মিউজিকের ছিল গলায় গলায় ভাব। যার ফলে দেখা যেত বেশিরভাগ মিউজিশিয়ান মারা যেতেন শুধু মাত্র অতিরিক্ত ড্রাগস আর নিজেদের খামখেয়ালির জন্য।
এই ২৭ ক্লাব কাকতালীয় ভাবে হোক অথবা শিল্পীদের নিজের প্রতি অবহেলার জন্যেই হোক, আর যেন এই সংখ্যা না বাড়ে, সেই আশাই রাখি আমরা।
ভালোবাসা চির সবুজ হয়ে থাকুক,তাঁরাও আমাদেন মাঝে এমন করেই বেঁচে থাকবেন।
ধন্যবাদ।
0 Comments