গল্প:মিথির গল্প
-এই যে শুনছো?এই শুনছো?
:হু-হুম বলো...
-কি হল?এত কি ভাবো শুনি?
:কই কি কিছু না তো!
-আবার মিথ্যা বলো?
:সত্যি কিছু ভাবছি না,পুরোনো জীবনটাতে ফিরে গেলাম আর তোমাকে পাওয়ার কথা গুলো ভাবছিলাম।
-আহারে,আমার জামাই আমাকে নিয়েও ভাবে?তা অতীতের প্রেম না ছ্যাঁকা নিয়ে ভাবো?
:দেখো ভালো হচ্ছে না কিন্তুু মিথি!
-কেন কি খারাপ হচ্ছে?
:হুম,বহুত খারাপ।
-আচ্ছা,তাই....?
বলেই আমার চুলে টান দিয়ে দৌড় দিলো মেয়েটা,এতক্ষণ যার সাথে কথা বললাম,সে আমার দশটা না পাঁচটাও না মাএ একটা বৌ!
অতীতের গল্পটা নাহয় এবার বলেই যাই!
সেদিন খুব সকালে, বের হলাম হাঁটতে। আমাদের বাসার ঠিক অপর পাশেই একটা ছোট গোলাপ গাছ আছে। গাছটার নিচে কেউ একজন বসে আছে। আর ফোনের ঐ পাশে কারও সাথে খুব করে কান্না করছে।
ভাবলাম হয়তো পারসোনাল ব্যাপার,তাই আর নাক গলাতে গেলাম না। মেয়েটা ঠিক আমার বিপরীত পাশে ফিরে আছে। শুধু একটা কথাই কানে আসছে-
"দেখো সায়েম,আমি দেখতে খারাপ,কালো এবং তা দেখেই তুমি প্রেম করছো।আমি তোমাকে অনেক বুঝিয়েছি যে আমার দ্বাড়া সম্ভব না প্রেম করা,তবুও তোমার পাগলামীর কাছে আমি হেরে গিয়ে দুটা বছর যা তা ভাবে প্রেম করছি। এখন বলছো,আমাকে তোমার পছন্দ না,আমি কালো তাই তোমার মা বাবা বিয়েতে রাজি না"!
আরও কত কি...!চলে আসলাম।তার দুদিন পর বাসার ছাদে বসে আছি। ঠিক তখনই কেউ একজন কান্না করছে মনে হল। আমাদের ছাদের পাশের ছাদে একটা মেয়ে ফোন কানে নিয়ে কান্না করছে। হঠাৎ মনে হল, দুদিন আগে যে মেয়েটা কান্না করছিল সে না?
তাই দাঁড়িয়ে রইলাম ওর ফোনের কথা শেষ হওয়া পযর্ন্ত।
কথা শেষ করে চলে যাচ্ছে , তখনই পেছন থেকে ডেকে বললাম,
-এই যে কান্নার রাণী।
মেয়েটা আমার দিকে তাকানোর ভঙ্গিটা খুব বড় রকমের ধাক্কা দিল আমাকে।মেয়েটা খুব নরমালই রিয়েক্ট করল আর একটা হাসি দিয়ে বলল,
:আমাকে ডাকলেন?
আমি অবাক হলাম,এত তাড়াতাড়ি মেয়েটা হাসতে পারে কেমন করে?হাসিটাও খুব সুন্দর তবে তার থেকেও বড় কথা মেয়েটার চোখ গুলোতে কেমন জানি মায়া আছে।
-হুম।
:কিন্তুু আমার নাম তো কান্নার রাণী না!
-এটাই তো দেখছি আজ দুদিন ধরে!
:কি?আজব পুরুষ তো আপনি,কান পেতে অন্যের ফোন আলাপ শুনেন মেয়েদের মতো?
-দেখুন ইচ্ছে করে করিনি, আপনি সামনে পড়ে যান, তখন আর কিছু করার থাকে না।
:ও, আচ্ছা! আমার নাম মিথি আক্তার জয়া। আপনার?
-সাহেদ কবির।
:আমরা এই বাসার নতুন এসেছি,আমি অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট,আপনি?
-আমি এখন কিছু করি না।বাবার টাকায় চলি।পড়াশুনা বলতে অর্নাস শেষ করলাম ১ বছর হল।
:আচ্ছা এখন আসি,পরে কথা হবে।
-শুনেন....
:জ্বী বলেন সাহেদ কবির সাহেব।
-আপনার এতো কান্না করার দরকার নেই,যখন ওর কথা মনে হবে,তখন ওর ছবিটাতে দুটো কিস করবেন।
বলেই দৌড় দিলাম, কারণ ও আমাকে খারাপ কিছু বলতে পারে। কিন্তুু যখন কারো ওপর খারাপ লাগা বা অবহেলা শুরু হয়, তখন তার ছবিতে চুমু দেওয়া যায় না। দিলে আরও রাগ হয়।কেন সে কাছে নেই!আর মেয়েটা যে পর্যায় আছে মনে হয় বুদ্ধিটা খারাপ, কিন্তুু মেয়েটা এটাই ট্রাই করবে।তার পর আমাকে খুঁজবে,এসে বলবে কিছুই তো হল না উল্টো রাগ বাড়ল।তারপর স্টেপ বদলাব।
দুদিন পর, বাসার গেট এ ঢুকব তখনই,কেউ একজন পিছন থেকে শার্ট ধরে টান দিচ্ছে। তাই ফিরেই দেখি মিথি। গাল, নাক, চোখ সব কেমন আধা লাল হয়ে আছে। কালো মানুষ গুলো সহজে লাল হয় না, হতে পারে না। কারণ গায়ের রং কালো তাই বোঝা যায় না। তাই আধা লাল দেখা যায়।
-কি হল?গুন্ডির মতো এমনে ধরছেন কেন?
:তুই আমাকে কেন কুবুদ্ধি দিলি?
-কেন?কি হয়েছে?
:ওর প্রতি রাগ বাড়িয়ে দিলি কেন?
-তাই বুঝি?
হাসতে হাসতে বললাম।মেয়েটা কিছুটা অসহায়ের মতো বাচ্চাদের মতোই করে বলল,
:হুম।
-ঠিক আছে সব কমিয়ে দিব।ওর যত ছবি আছে নিয়ে আসেন।
:সত্যি?
-হুম।
তিন মিনিট পর দেখি ইয়া বড় এক এলবাম নিয়ে হাজির। এত ছবি!আমার পুরো পরিবারেরও মনে হয় এত ছবি নাই।
মেয়েটাকে সাথে করে, একটা লেকের পাশে নিয়ে গেলাম। তারপর বললাম ওর প্রেমিক কে ফোন দিতে।
দিয়ে একই হল কান্না কাটি শেষে ছেলে ফোনটা রেখে দিল।
:দিলেন তো মনটা খারাপ করে।
-হাহা, আচ্ছা তাই?
:হুম।
হাতের জামার উল্টো সাইট দিয়ে চোখের জল পরিষ্কার করে,বলল
:ধুর যাই গা।
-এই নিন কলম।
হাতে নিয়ে বেকুব হয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।
-এটা দিয়ে চোখ বন্ধ করে আমি যেখানে বলি সেখানে আঁকবেন ।
:কেন?
-মন ভালো হবে।
তারপর ওর ছবির উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেল।চোখ খুলে ছবি দেখে তো হাসতে হাসতে শেষ মেয়েটা।
তারপর চোখ খুলে ছবি গুলোতে আগুন দিল,লেকের সবাই তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। আর মেয়েটা এক ধরনের নিষিদ্ধ আনন্দ পাচ্ছে। কারণ প্রিয়জনের ছবি আগুনে দিতে নেই, তাহলে কষ্ট লাগে নিজের। কিন্তুু মেয়েটার বিপরীত হল।
তার কয়েকদিন পর,মেয়েটার সাথে ফোনে কথা বলা,দেখা করা বা ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে এবং সম্পর্কটা তুমি তে এসে গেছে।
একদিন বলল,
:এখনও ওর কথা মনে পড়ে।
-তো কি করবে?
:তবুও আনন্দে থাকার একটা বুদ্ধি দিবে?
-ফোনে টাকা আছে?
:হুম।
-ওকে ফোন দাও, দিয়ে বলো তোমাদের যেখানে বেশী বসা হত,সেখানে আসতে শেষবার দেখা করতে।আসলে অনেক বোঝাবে যদি রাজি না হয়, তাহলে যত ইচ্ছে গালাগালি করে চলে আসবে।
:যদি আমাকে কিছু করে?
-আমি পেছনে আছি তো।
:না পারব না।
-পারতে হবেই কল দাও।
আমি সত্যি চাই,মেয়েটা ঝুলে না থেকে এটা থেকে মুক্ত হয়ে যাক আর আমার বুকে এসে ঘুমায় যেন। কারণ মেয়েটার প্রেমে কেমন করে জানি পড়ে গেলাম নিজেও জানি না!
বিকেলে সত্যি সত্যি ছেলেটাকে প্রচুর গালাগালি করে আসল। তারপর আর কখনোই ওকে ঐ ছেলের ব্যাপারে কিছু বলতে শুনিনি।উল্টো হাসতে হাসতে ওর বোকামী গুলো মনে করে বলত।
এই ভাবেই চলল,একটা সময় ওর পড়াশোনা শেষ করল। যারা ওকে কালো বলতো ওরা নিজের মেয়েকে দেখিয়ে বলতে শুরু করল,"দেখ মিথিকে কত কালো!তবুও পড়াশোনা করে আজ কত ভালো জব করে"।
হুম,ও এখন একজন শিক্ষক কলেজের। কালো হয়েও সব বাধা দূরে রেখে এখন সবার মুখে,সবার আদর্শ হয়ে আছে বাড়ির চার পাশে সেই মেয়েটি,যার ভালোবাসার মানুষ কালো বলে একা রেখে চলে গেছে, বান্ধবীদের উপহাস,এলাকার ছেলেদের উপহাস হয়েছে।
সেদিন পড়াশোনা শেষ করে এসে বলল,
:সাহেদ বাবা মার কাছে বিয়ের সম্বন্ধ আসতছে। জবে তো জয়েন করতে পারলাম না,কি করব?
-আমি ছল ছল চোখে খালি,ওহ বলে ছিলাম। বিসিএসটা শেষ করে নাও। আর আগামী কালকে একটু দেখা করবে আমার সাথে?একটা শপিং ব্যাগ হাতে দিয়ে বললাম।
:এই গুলো কি?
-বাসায় গিয়ে দেখো।
চলে এসেছিলাম সেদিন।
তারপর দিন ও ঠিক এসেছিল,সেই কালো মেয়েটি যার চোখে ছিল সমাজের নিয়ম ভাঙ্গার আর ভালোবাসা পাবার হাজারো স্বপ্ন।
বলে দিয়েছিলাম, সারা জীবন পাশে থাকতে চাই, কি যেন ভাবলো দুমিনিট। দৌড়ে রিক্সায় উঠলো আর বলল ১ঘন্টা বসে থাকো এখানে।
ঠিক ১ঘন্টা পর,একটা কালো পান্জাবী নিয়ে এসে বলল,যদি এটা পড়লে সুন্দর লাগে তবে বিসিএস এরপর বিয়ে না হয় আজই!!
হাহা। হুম অদ্ভূত ভাবে সুন্দর লেগে ছিল এবং বিসিএস এ পাশ করে এখন একজন ক্যাডার। সেদিনটাতেই সে তার জীবনের দুটা জিনিস কে এক করতে আমায় বিয়ে করে ছিল।
তাই আজও মিথি নামের মেয়েটির ভালোবাসা এখন আমায় পবিএতা দেয়।দেয় সমাজের চোখে চোখ রাঙিয়ে তাকানোর সাহস।
-রেজাউল করিম
0 Comments