গল্প:পুরোনো আলমারি

 গল্প:পুরোনো আলমারি





'মানুষ কখনো চলে যেতে পারে না,সে যাবার আগে অন্য মানুষটার হৃদয়ে তার নিজের অনুরূপ আর হাজার খানেক মানুষ জন্ম দিয়ে যায়'!

তেমনি একজন মানুষ হল শুভ্র, তখন আমরা ভার্সিটিতে মাত্র এডমিশন নিয়ে ছিলাম।
সবাই কত উল্লাসিত আর মনে হয়, প্রতিযোগিতা দিয়ে বন্ধু করে নিচ্ছে সবাই সবাইকে!

আমি ইয়া বড় চশমাটা পড়ে হাবাগোবা…
ওহ না, আমি তো মহিলা…..
 ইশ আবার ভুল করে বসলাম!আমি তো মহিলা বয়সী না,মাত্র ভার্সিটিতে উঠলাম। তাহলে আমি হলাম একজন হাবিগুবি টাইপের মেয়ে!

ও হ্যাঁ ভুলেই গেছি,আমার পরিচয়টা দিতে। আমি ইশরাত রহমান ,বাবার কথা কি বলব? আমি যেমন পুরানো কালের ফ্রেমে বন্দি থাকা মানুষ তেমনি তিনিও ঐরকম সময়ের পিতা।

শুভ্রর সাথে অনেকেই কথা বলতে যাচ্ছে,কিন্তুু ও কেমন যেন চুপ করে হাতটা বাড়িয়ে আবার গুটিয়ে নিচ্ছে। ওকে দেখলে যে কেউ ভাববে, হাবাগোবা, কিন্তুু প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।যেমনটা আমিই পড়ে গেছি, সবাই কি জানি বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট।

অনেক দিন হয়ে গেল,এখনো ওইরকম করে কিছু জমিয়ে উঠতে পারিনি। অনেক দিন বললে ভুল হবে। ১টা বছর হতে যাচ্ছে,শুভ্রকে শুধু দেখেই যাচ্ছি ।
ক্লাসে,রিমা,সাদিয়া আর প্রিয়া দেখি ওর সাথে উঠতে বসতে ঘেঁষে ঘেঁষে কথা বলে। তখন আমার মাথার রক্ত পায়ে নেমে আসে…
আরে ধুর পায়ের রক্ত মাথায় চলে আসে।

এর মধ্যে যে কথা হয়নি তা নয়,কয়েকবার কথা হয়েছে কিন্তুু তাতে আর কি হয়? কোথায় তার হাত ধরে কদম তলায় বড় বড় কদম পাতা মাথায় রেখে ভিজব সে ইচ্ছে, সেখানে কিনা প্রজেক্ট আর প্রেজেন্টশন করে দিন যায়।
আর না, এইবার একটা হ্যাস্তনেস্ত তো করতে হয় ।তাই আজ যখন ক্লাস শেষ করে বের হচ্ছিল। ওকে বললাম,

:: শুভ্র শুনে যাও তো।
:: হুম ইশু বলো।
ওর কোমল চোখে তাকিয়ে,মনে হচ্ছে আমি হারিয়ে যাচ্ছি বরফের কোনো নদীর জলে। এমন করে যদি হারিয়ে যেতে পারতাম!
তখনই ও ডেকে উঠে।
ভার্সিটিতে সবাই আমাকে ইশু বলে ডাকে না বাট ওই ডাকে ।তার পেছনেও কারণ আছে। যখন প্রজেক্ট বা প্রেজেন্টেশন করতে ম্যাম আমাকে ওর গ্রুপে দিল কত যে খুশি হয়ে ছিলাম!
কিন্তু রিমা,সাদিয়া ওরা একটু অন্য ভাবেই নিয়ে ছিল,কারন ওরা চেয়েছিল ওরাই পড়বে ওর গ্রুপে।
:: ইশু, কথা বল না কেন?
:: ও হুম,আমি একটু তোমার সাথে কথা বলতে চাই, মাঠে বা ক্যাফেটেরিয়া তে চলো।
::মাঠেই চলো। ক্যাফেটেরিয়া তে আমার ভালো লাগে না।

ওর চোখ জোড়া এত সুন্দর কেন! আমি হারিয়ে যাচ্ছি বার বার, আমি শেষবার হাতটা ধরতে চাই শুভ্র তোমার। আমার চশমাটা কোথায় শুভ্র? আমি তোমায় দেখতে পাচ্ছি না কেন? আমি কি তলিয়ে যাচ্ছি তোমার শীতল চোখে?

শুধু ঝাপসা চোখে ওর চিৎকার করা মুখটা ভেসে আসছে,হাতে একগুচ্ছ কদম। সাথে হাসি হাসি একটা পিচ্চি ছেলে।

শুভ্র ইশরাতের মাথাটা কোলে নিয়ে রাস্তায়ই বসে আছে। দুনিয়ার কান্না যেন বাঁধন ছাড়া হয়েছে ওর।
একটু আগে একটু আগেই তো ও বলল,"শুভ্র তুমি কি বোঝো না আমি যে তোমায় ভালোবাসি"?
:: কি!তুমি?নাকি আমি?সারাটা দিন,তোমায় দেখি। যেমন পুরানো দিনের ফ্রেমে বন্দি একটা মানুষের সমস্ত সভ্যতা তোমার ভেতর বসবাস।
তাই ভয়ে বলিনি,কখন আবার রিজেক্ট করে দাও।
:: আর তুমি কি? তুমিও তো বাবা চাচার আমলের একটা ভাঙ্গা কাঠের আলমারী,যা ধরলেই ভেঙ্গে যাবে মনে হয়।তাই ধরিনি।
:: তা হলে এখন আসছেন কেন শুনি,নতুন মডেলের আলমারী?
:: মজা করবে না,ভাবলাম ভেঙ্গে গেলে জোড়া লাগাবো তাই !
:: আচ্ছা দাঁড়াও,তোমার প্রিয় কদম নিয়ে আসি।কিন্তু শোনো ইশু তুমি লেডিস,সো লেডিস ফার্স্ট। কদম তোমায় আমি দেব না,ওই যে বাচ্চাটা,ও পেরে দেবে। আর তুমি আমায় প্রপোজাল দিবে!
:: কি বললে তুমি?ওই কোন দেশে দেখেছ তুমি মেয়েদের আগে প্রপোজাল দিতে? কত বড় সাহস!
:: আরে ভালোবাসো বলেই তো দিবে,
::তবুও লজ্জা লাগবে তো!
:: হাহা দেখা যাবে, যাচ্ছি আমি।

তারপর, তারপর যা দেখলেন একটু আগে। তাই হল। ভার্সিটির গেট থেকে বের হয়েছে মাত্র, একটা মিনি মাইক্রো ব্রেকফেইল করে।
আর নতুন একটা জীবনের সমাপ্তি, ভালোবাসার শুরুটা শুরুতেই শেষ হয়ে গেল!

-রেজাউল করিম



Post a Comment

0 Comments