গল্প: কবিতা ও সংসার
গত কিছু দিন হলো,লেখাতে মন বসে না। তাই মাঝে মাঝে জীবনানন্দ নিয়ে বসে থাকি ঘন্টার পর ঘন্টা।
মনে হয়,সময়ই কেমন দ্রুত চলে যায়। জীবনে কি আছে?
মাঝে-মাঝেই মনে হয়,এই জীবনটা বই পড়ে কাটিয়ে দিলে মন্দ হতো না।
অনেক দিন হয়ে গেলো,একটা পুরোনো শাল পড়েই কাটিয়ে দিচ্ছি।
শ্রী র কত বকাবকি,গত তিন বছরে এই একটা শাল-ই ব্যবহার করছি। শীত,বর্ষা অথবা গরম।
হাস্যকর হলেও সত্য,মানুষ লেখক অথবা কবি হতে আজকাল অনেক ধরনের ভান ধরে। তারা ভাবে ভান ধরে কবির ভাব নেওয়া যায়।
মাঝে মাঝে আমার কিছু বাস্তব হিমুর সাথে দেখা হয়,আবার কৃত্রিম হিমুর সাথেও। প্রেমিকার টাকা মারার বুদ্ধি মাথায় নিয়ে ঘোরে এরা। এই হুমায়ূন আহমেদ,উনি এমন এক সাজ দিয়ে গেছে নারীদের যা একবার কোনো মেয়ের মাথায় ঢুকিয়ে দিলেই হলো,সে ভাবতে শুরু করে সে হয়ে গেছে রূপা আর তার প্রেমিক হচ্ছে হিমু। তাই রূপা হিসেবে তার অনেক টাকা থাকতে হবে আর তার প্রেমিক-হিমুর থাকবে পকেট খালি...!
" সরাইখানার গোলমাল আসে কানে,
ঘরের সার্সি বাজে তাহাদের গানে,
পর্দা যে উড়ে যায়
তাদের হাসির ঝড়ের আঘাতে হায়!
মদের পাত্র গিয়েছে কবে যে ভেঙ্গে! "
- আজকেও এটা দিয়েই শুরু করলে?
তোমাকে কতবার বলেছি"একদিন খুঁজেছিনু যারে "
এই কবিতাটা দিয়ে শুরু করতে..!
- দেখো শ্রী, আমার পছন্দের গায়ে দরদাম লাগিয়ো না।
- আমি দরদাম দিচ্ছি না,
- তাহলে দিচ্ছেন টা কি শুনি?
- আমারও তো একটা পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার থাকে।
- তোমার পছন্দ দিয়ে আমি করবো টা কি?
- কেন? আমার পছন্দের বুঝি কোনো দাম নেই?
- না নেই,যাও এখন।
- আগে তোমার লেখা একটা কবিতা শোনাও তারপর যাচ্ছি,না হয় বিরক্ত করতে বাধ্য হবো।
- আমার কোনো কবিতা নেই,আমি পারবো না,
যাবে তুমি?
আকাশেরও কষ্ট হয়,পাহাড় গুলোও সারা জীবন দাঁড়িয়ে থাকে। তাদেরও বুঝি কষ্ট হয়? এতো ভালোবেসে ঝড়নাকে বুকে ধরে রাখে পাহাড়,তবুও শেষ অংশটায় ঝড়নার জলটাকে ধরে রাখতে পারে না। এতো কষ্ট কোথায় রাখে তারা? আমিও মাঝে মাঝে ভাবি, ঠিক আমার সামনের নারীটা বুঝি এমন করেই বেঁচে আছে?
আমার প্রতিটা দিন তার সুখের হাসিতে জড়ানো,আর আমি কখনো ফিরে দেখিনি। অবাক হলাম!বহুদিন ছুঁয়ে দেখিনা নারীটাকে।স্রেফ একটা নারী হিসেবে ছুঁয়ে দেখিনি তাকে।
আমাকে ভোলাতে তার কত রাগ অভিমান,
চোখের কাজল দুটি লেপ্টে যাবার অবস্থায় আছে।কখন যে আবার বৃষ্টি নামে কে জানে।হাতে একটা জবা ফুল। মাত্র তুলে আনা পূজার ফুল। যেটা থাকার কথা ফুলের সাঝিতে সেটা ওর হাতে কেন?
ভাবতেই অবাক হলাম!
সেই কবে ঘর-বাড়ি ছেড়ে দুজন আছি একলা এক সংসারে। গত এক বছরে ওর হাতটা ধরে বলা হয়নি ভালোবাসি অথবা একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসা নয়তো বেণীতে একটা ফুল গেঁথে দেওয়া।
পাহাড় আর আকাশটা বুঝি এমন করেই আগলে রাখে ভালোবাসা গুলোকে?
আমার সিগারেটের অ্যাশ-ট্রে আনতে আমিই ভুলে যাই অথচ সে কিন্তু ভোলেনি আজ পর্যন্ত। আমার বস্তাপচা লেখার কলমও তারই কেনা,কবে যে কলম শেষ কিনেছি ভুলেই গেছি।এই এক কলম দিয়েই এতো বছর লিখে যাচ্ছি।
অদ্ভূত হলেও সত্য।হুম,তবুও সেই মানুষটাকে দেখার সময় হয়ে ওঠেনি।
-শ্রী...!
-হুম বলো।
- একটু ঘুরে আসলে কেমন হয়?
যেন হঠাৎ আকাশ হাতে পেলে কোনো পাতাল দেবতা যেমন খুশি হয়,ঠিক তেমনটিই। মনে হচ্ছে ট্রয়কে জয় করে হেলেন নিয়ে ফিরছে গ্রিক সৈন্যরা।
ওর এমন খুশিগুলো কত সামান্যতেই,
অথচ আমি!
- ভালোই তো হতো,কিন্তু তোমার তো সময় নেই। তোমার সময় হয় এইসব লেখালেখি আর...
- আচ্ছা ঝগড়া করবে নাকি রেডি হয়ে বের হবে?
- ওমা কি বলো? আমি তো রেডিই।মাত্র পূজার ঘর থেকে বের হলাম,স্নান তো করেই আছি। এখন শুধু মাথায় ফুলটা গেঁথে দাও।
- এখনই?
- হুম এখনই।চলো বের হই। কবি মানুষদের আবার লজ্জা-শরম থাকতে নেই জামা কাপড় নিয়ে। এরা সব কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারে শুধু লেখাটা ভালো হলেই হয়!
নারীরা সুযোগ পেলেই হলো,দার্শনিক হতে সময় নেয় না।আর সুযোগ না দিলে,পৃথিবীর সব থেকে অসহায় প্রাণী।যদি,প্রেমিক হিসেবে তুমি খাঁটি হতে পারো।
-জ্বি,মেনে নিলাম তোমার সব কথা।
দুজন হাতে হাত রেখে হাঁটছি,সিঁথিতে
সিঁদুরটার দিকে তাকিয়ে অবাক হচ্ছি,নারীরা এত সুন্দর করে সিঁদুর পড়াতেও আর্টিষ্ট হতে পারে কিভাবে?
একটু পর-পর ও মুচকি হাসছে,
ভালোবাসা বুুঝি এমনই হয়?
-রেজাউল করিম
0 Comments