বই রিভিউ
বইয়ের নাম: চিলেকোঠার সেপাই
লেখক: আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
ধরণ: উপন্যাস
প্রকাশক: ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড
প্রকাশকাল: ১৯৮৬
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩০৪
পটভূমি:
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঠিক দুই বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে চেতনার যে জাগরণ ঘটে সর্বোপরি স্বাধীনতা অর্জনের প্রাক্কালে গন অভ্যুত্থানের ঘটনা এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য।
তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এর পতন ও শেখ মুজিবুর রহমানকে অন্যায়ভাবে জেলবন্দী করার কারনে ও মুক্তির দাবীতে বাংলার সকল স্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিশাল গন আন্দোলনে সামিল হতে শুরু করে। পাকিস্তানি সরকারের অন্যায় এবং তার থেকে স্বভূমিকে রক্ষা করার তাগিদ সকলের মধ্যে গা ঝারা দিয়ে উঠতে শুরু করে। ছাত্র, সরকারী চাকুরিজীবী, নিম্নস্তরের মানুষ সকলের মধ্যেই এক দেশপ্রেমিকের সত্ত্বার জাগরণ ঘটে। ওসমান ও হাডডি খিজির সেই রকম মানুষদের প্রতীক। ওসমান একজন সরকারী চাকুরিজীবী অন্যদিকে খিজির একজন ভাড়াটে রিক্সাচালক। ওসমানের চরিত্রে প্রাণের ভয় যদিও দৃশ্যমান তবুও যে কোনো গণ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ঝোঁকও তার মধ্যে প্রবল। তাই দেখা যায় সুযোগ পেলেই সে চলে যায় কোনো মিছিলে কিংবা তার চেনা বন্ধু ছাত্রদের রাজনৈতিক আড্ডায়। কিন্তু কার্ফু, পুলিশের নির্বিচারে চালানো গুলি থেকে নিজেকে প্রাণপনে বাঁচানোর তাগিদও তার মধ্যে প্রবল। অন্যদিকে খিজির নির্ভীক। ভাড়াটে রিক্সাচালক হয়েও মালিকের বিরুদ্ধে সে আন্দোলনে যোগ দিতে পিছপা হয় না। দেশের জন্যে কিছু করার মনোবল তার মধ্যে প্রবল। যে কোনো আন্দোলনে তার স্বতঃস্ফূর্ততা প্রবল। প্রাণ দিতেও সে ভীত নয়। কারোর তোয়াক্কা করার মানুষ সে নয়। খিজিরের মধ্যে দিয়ে লেখক সেই সমস্ত তুলে ধরেছেন যারা নিম্নশ্রেনীর হতে পারে কিন্তু প্রাণশক্তি তাদের মধ্যে সর্বাধিক।
উপন্যাসে আরেক চরিত্র আনোয়ার। সে মূলত বামপন্থী কর্মী। আনোয়ার যখন তার গ্রামে যায় সেখানে গিয়ে সে পরিচিত হয় জোতদার শ্রেণীদের অত্যাচার ও অন্যায়ের। বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে সে একসময় গ্রামের সকল নিম্নবিত্তদের নিয়ে একজোট হয়ে রুখে দাঁড়ায় গ্রামের অত্যাচারী জোতদার খয়রার গাজির বিরুদ্ধে। যদিও সেই সফলতা তারা শেষমেস পায়নি তবুও মুখ বুঝে অত্যাচার সহ্য করা সেই গ্রামের দুর্বল কৃষক মানুষদের মধ্যে প্রতিবাদী সত্তা গড়ে উঠতে থাকে। চেংটু, করমালি যাদের মধ্যে অন্যতম।
এইভাবেই লেখক উপন্যাসের দুটো ঘটনার মধ্যে দিয়ে তৎকালীন সময়ের অন্যায় অবস্থা ও গণজাগরণের কাহিনী তুলে ধরেছেন।
এরপরেও রয়েছে ওসমানের জীবনের একটা নতুন মোড়। খিজিরের ব্যক্তিজীবন ও প্রতিবাদী সত্তা, তার পরিণতি এইসমস্ত কিছু জানতে হলে অবশ্যই উপন্যাসটি পড়া দরকার।
নিজস্ব কথা:
'চিলেকোঠার সেপাই' উপন্যাসটিকে বলা যায় তৎকালীন সময়ের এক জ্যান্ত দলিল। সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিবর্তন, আওয়ামি লিগের ক্রম উত্থান, সাধারন মানুষের মধ্যে চেতনার জাগরণ, এছাড়াও দেশের এমন পরিস্থিতি মানুষের পারিবারিক জীবন ও মানসিক অবস্থা যে কতটা বদলে দিতে পারে তা স্পষ্ট অনুধাবন করতে পারবেন এই উপন্যাসের প্রতিটা পাতায়। বাংলার স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রাক সময়কে কিছুটা হলেও অনুভব করা যায় এই উপন্যাসে। আর এটাই এই উপন্যাসের সার্থকতা।
আশা করি সকলে পড়ে উপকৃতই হবেন বইটি পড়ে। না পড়লে অবশ্যই পড়ে নেবেন বইটি। কোনো দিক দিয়েই হতাশ হবেন না।
ধন্যবাদ।
0 Comments