লিলু (পর্ব: ২ )


 লিলু,

আমার প্রিয় লিলু।তুমি তরু লতার মত বেড়ে উঠছ আমার ভেতর ।শেষবার যখন দেখা হল,টাউন হলের শামসু'র দোকানে তুমি রেগে বলেছিলে,
প্রিয় জানো,পৃথিবীতে মানুষ দুভাবে বাঁচতে পারে,
" হয় সব কিছু মেনে নাও,নয় পৃথিবীকে ভেঙ্গেচুরে বাঁচতে শিখো"।
আমি তোমার কাঁধে মাথা রেখে,সব নিয়ম ভেঙ্গেচুরে একাকার করে দিয়ে বলেছিলাম,
"পৃথিবীর সব নিয়ম আমার নামে হোক"।
তুমি হাসতে হাসতে বললে,'আসছে আমার হিটলার'!
তুমি চলে গেলে,তারপর, তারপর আমি আবার হতাশায় ডুবে গেলাম। রাত্রি হলেই,ঈশ্বর রুপে মৃত্যু,সাদা কাপড়ে জড়িয়ে ধরে আমায়। মা, মা বলে যখন বেঁচে থাকার জন্য চিৎকার করি,তখন একটা বক হয়ে উড়ে যায় আমার সব নিয়ম,আমি আবার একা হয়ে পড়ি।

প্রিয় লিলু,এখন ভোর ৫টা বেজে ৭ মিনিট।মনে আছে তোমার? শেষবার যখন ট্রেনের বগিতে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম,পেছনে ফেলে আসছিলাম এক বিষাক্ত স্মৃতি ভর্তি ঢাকা শহর। এই যে গত সেপ্টেম্বরে আমার যে কাব্যগ্রন্থ বের হল,তুুমি বললে,
"শালা কবি,নারীর নাভী আর স্তন ছাড়া তোর কিছু আসে না"?
আমি হাসতে হাসতে বললাম,গাঁজার নেশা বড় নেশা। সেখানে নারীর স্তন যদি সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে তোলে,তবে তার থেকে আশ্চর্য সৃষ্টি ঈশ্বর কি আর কিছু গড়েছেন?
লিলু শোনো,আমি আর বাঁচতে চাইনা, এই বিশ্বাসে তুমি বেঁচে থেকো না। 
গত বৈশাখের কাল বৈশাখী ঝড় আমার বাড়িঘর সব উড়িয়ে নিয়ে গেছে,সাথে আমার মায়ের একটা ওড়নাও। মা তো গত হল,আজ শুদ্ধ হাজার খানেক দিন হবে।তাই মায়ের ওড়নাটা খুঁজতে আমি বাংলাদেশ ঘুরতে বের হব।
তুমি,তুমি ভয় পেওনা,আমি আর ১৭৫/A বাড়ির ঠিকানায় চিঠি দিব না। শুনলাম, তোমার একটা মেয়ে হয়েছে?লাল টুকটুকে পায়ের পাতা,নাকটা নাকি ঠিক তোমার স্বামীর মতো হয়েছে মেয়েটার!আশ্চর্য! দেখলে তোমার খাবার ঘরের ওয়ালক্লথটার খোঁজও আমি রাখি। 
ভালো থেকো প্রিয় লিলু,মেয়েটিকে বলিও আমার কথা। যে তোমায়,
" একদিন ভালোবেসে ছিল এক উজবুক পাগল ছেলে,যার ইয়া বড় বড় চুল, দাড়ি,চোখের উপর ভ্রূ তে একটা দাগ আছে পাগলটার"।
যদিও তোমার বলতে বাঁধা নেই,আমরা কত রাত চাঁদ দেখার নাম করে, হারিয়ে ছিলাম সন্তান উৎপাদনের উন্মাদনায়।আমি জানি,লিলু আমি জানি তুমি কাঁদবে না। তুমি ভীষণ শক্ত মেয়ে,যেবার তোমার বাবা মারা গেল,তুমি আস্তে ধীরে হেঁটে আসলে আমার কাছে,বললে,
"এই কবি আমার প্রথম প্রেমিক আজ মারা গেছে, তার নামে কবুতর উড়াব। শান্তির প্রতীক নাকি কবুতর? তবে চল,আজ হাজার খানেক কবুতর উড়াব।আমার প্রথম প্রেমিকের মুখটা এত স্পষ্ট কেন আমার চোখে?"
তোমার চোখ গুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠল,সাথে মুক্তার দানার মত জল গুলো দেখতে পেলাম।এই ছিল তোমার প্রথম এবং শেষ কান্না।
শুনেছিলাম,মেয়েরা কখনো প্রথম প্রেমিকের মত কাউকে হারাতে পারে না।তুমি কি করে আমায় হারাবে? যেখানে তোমার প্রথম প্রেমিকের জন্য হাজার একটা কবুতর উড়ালে,আমার জন্য আর কি বা উড়াবে লিলু?
আজও কি তোমার চোখ উজ্জ্বল তারার মত জ্বলে? 
লিলু,ভালো থেকো। 
স্বপ্নের ঠিকানা দিলাম,
সেখানে ইচ্ছে মতো আমায়,
"কবি নামে ডেকো"।

-নরকীট 

Post a Comment

3 Comments