প্রবন্ধ:
'রাষ্ট্র এবং বিবাদ'
রাষ্ট্র হতে হলে আমাদের কি দরকার?একটা দল, মুল ভূ-খণ্ড,স্বাধীনতা এবং ক্ষমতা।এর সাথেই স্তম্ভ হিসাবে আইনের শাসন এবং বিচার-ব্যবস্থা কার্যকর হওয়া চাই।যদি এদের ভেতর কোনোটা কম থাকে তবে রাষ্ট্র হলেও তা সু-রাষ্ট্র হবে বলে মনে হয় না।
আমি এখানে দুটি জিনিস একটু বদলাতে চাইব।এক হল,স্বাধীন ভূ-খণ্ড এবং দল অথবা গোষ্ঠী।একটা দল কখনো রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় যেতে পারে না,নিজেকে সংশোধন না করে।
যদি এমন হয়,সু-দল অথবা সু-নাগরিক,তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয়?যেখানে এক দল নাগরিক,দেশ অথবা রাষ্ট্র কে বিক্রি করে দিতে চাচ্ছে এবং অন্যদল, রাষ্ট্র কে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইছে। তাহলে সেটা দল হতে পারে না।
আসল কথাটা হল,নাগরিক অবশ্যই সু-নাগরিক হতে হবে।তাহলেই কেবলমাত্র আমি মনে করি,সু-রাষ্ট্রের জন্ম হবে,অন্যথায় এই রাষ্ট্র নামের আড়ালে নিজের নিজের 'পেট-মোটা' করার প্রতিযোগিতা শুরু হবে।
একটা ভূ-খণ্ড বহিরাগত দিক থেকে স্বাধীন হলেও,আভ্যন্তরিক দিক দিয়ে অর্থাৎ রাষ্ট্রের নাগরিক কতটা স্বাধীন?সেটাও এই রাষ্ট্রের দেখা উচিত।
এখন দেখা যাক,বিবাদ বলতে আমরা কি বুঝি?দ্বন্দ্ব অথবা মুখ ফিরিয়ে নেওয়া কি?হুম,তেমনটি হতেই পারে! বিভেদ কি কেবল মানুষে-মানুষে হয়?অদৃশ্য এই রাষ্ট্রের সাথেও তো হতে পারে!
রাষ্ট্রের যে সংজ্ঞা,সেটাকে আমি মনে করি আপেক্ষিক একটা বিষয়।একটা লোক বিয়ে করার পর,তার শখ হল,তার একটা সন্তান চাই।কিন্তু সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তার ভরণপোষণ সে দিতে পারছে না!তাহলে কি হবে এখন সন্তানের?যদি আমার রাষ্ট্র,সেই পিতার মতই তার বীর্য মায়ের ডিম্বাণু তে প্রবেশ করিয়েই নিজের 'দায়িত্ব' শেষ বলে মনে করে,অর্থাৎ স্বাধীনতা,ভূ-খণ্ড,জনগণ এবং ক্ষমতা অর্জন করেই যদি মনে করে যে,রাষ্ট্র স্বীকৃতি পেয়ে গেছে,তবে কি সেটা সেই কর্তব্যহীন পিতার মত হয় না?
এই যে পিতা এবং সন্তানের দ্বন্দ্ব ঠিক এমনই।রাষ্ট্র এবং তার নিজস্ব ভেতরের অনাকাঙিক্ষত চাহিদা।যদি রাষ্ট্রকে আমি সব দিয়ে অর্থাৎ বিবাদমুক্ত করে দেই,কিন্তু রাষ্ট্র বিবাদকে ধরে রাখে,এর দায়ভার কে নিবে?অবশ্যই রাষ্ট্র কে নিতে হবে।যদি রাষ্ট্র সেটাতে অপারগ হয়,তবে তার অর্থ দাঁড়ায়,রাষ্ট্র তার দলের চাহিদা বা আকাংক্ষা মেটাতে ব্যর্থ।তবে সেটা সু-রাষ্ট্র নয়।যদিও রাষ্ট্র সু অথবা কু হতে পারে না,হয় রাষ্ট্র হবে অথবা রাষ্ট্র হবে না।এখন রাষ্ট্র বিবাদের দিকে ক্ষমতা ছুঁড়ে দিতেই পারে,যে না আমি তোমাকে চাই না।কিন্তু বিবাদ যদি তাকে রাষ্ট্র না মানে অর্থাৎ জনগণ যদি রাষ্ট্রকে না মেনে নেয়,তবে তাকে হেরে যেতে হবে।
আমাদের বুঝতে হবে,রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের জনগণ-ই হল এখানে মৌলিক বিষয়।ক্ষমতা দিয়ে আপনি বহিরাগতদের থেকে রক্ষা পেতেই পারেন,কিন্তু রাষ্ট্র যখন বিবাদে জড়িয়ে পড়বে,তখন আমরা অর্থাৎ জনগণ রাষ্ট্রের বড় শত্রু এবং এই রাষ্ট্রই আবার জনগণের শত্রু হয়ে উঠবে।
এখন আমরা কিভাবে রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিবাদ বা শত্রু হয়ে উঠি দেখা যাক।আমি মনে করি,মানুষের মৌলিক চাহিদা গুলোই রাষ্ট্রের সব থেকে বড় বিবাদ বা বিবেদ সৃষ্টি করে।যখন কোনো রাষ্ট্র জনগণের মৌলিক চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়ে ওঠে,ঠিক তখনই কেবল ওই দুটি শব্দের জন্ম হয়।তখন জনগণই বেছে নেয়,তারা আসলেই কি চায়! রাষ্ট্র নাকি বিবাদ!
তাই সবার শেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে,রাষ্ট্র এবং বিবাদ পিতা ও সন্তানের মত।যদি বিবাদ সৃষ্টি হয়ে ওঠে,ঠিক তখনই রাষ্ট্র নিজ সত্তা হারিয়ে বসে।তখন যে চারটি মৌলিক বিষয় নিয়ে কোনো ভূ-খণ্ড কে রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষনা করি,তখন সেটা আর সেই রাষ্ট্র থাকে না,হয়ে ওঠে একটুকরো ভূ-খণ্ড মাত্র।
0 Comments