গল্প: প্রিয়ন্তীর গল্প(১)

 প্রিয়ন্তীর গল্প-১




কোনো একদিন আজকের সকালের মতই, পাখি ডাকবে।কেউ এসে তোমার আঙ্গিনায়, এই যে মহিমের মা নয়তো,রাহির মা বলে ঠিক ডাকবে।শুধু পরিচিত মুখের ডাকে তোমার নিজের সেই প্রিয়ন্তী নামটা আর শুনবে না হয়তো। 

কোনো একদিন সকালে ঠিকই,এক মগ কফি দুজনে ভাগ করে ঠোঁট ভেজাবে।কিন্তুু তোমার ঠিক বিপরীত দিকের আমি খবরের কাগজে ঠিক বেরসিকের মতোই হয়তো আর চোখ রাখব না!

তোমারও স্বামী হবে,আমারও একটা বৌ হবে। তুমিও মা হবে আমিও বাবা হব।তাই বলে কি করে যে স্মৃতি আর স্পর্শ গুলোর জন্ম হল তা ভুলে যাব?
হয়তো কোনো একদিন আসবে,তুমি বুড়ি হয়ে যাবে,চুল পাক ধরবে,চোখ ভিতরে চলে যাবে, চামড়া ঝুলে যাবে আর তোমার সুন্দর দেহটার মাংস গুলো খসখসে হয়ে যাবে! 
কথা ছিল,সেদিন আমি চেয়ারটায় বসব আর তুমি একটা পিরিতে বসে আমার হাতে কফির মগটা তুলে দিয়ে জ্যোৎস্না দেখাবে আর বলবে,

:মনে আছে,তোমার রাফি?
আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার দিনে প্রথম কবিতার কথা?
আমিও বলবো,
-হুম থাকবে না কেন?
:কোন বইটা বলতে পারবে?আর কোন লাইন গুলো বলে দিয়েছিলে?
-কেন নয় প্রেয়সী আমার?আমার সবই মনে আছে।সেদিন ছিল রবিবার,প্রতি রবিবারই আমার একটা নতুন বই চাই। সেই অনুযায়ী বই নিতে গিয়েছিলাম,করিম ভাইয়ের দোকানে।
তুমি একটা ওড়না সামলাতে পারো না কিন্তুু ঠিক চারটা বই কিনতে সারা দোকান তোলপাড় করে ফেলে...
:তারপর কি? ভুলে গেলে?
-না,সেদিন জীবনানন্দ দাশের'ঝরা পলক' কাব্যগ্রেন্থর 'মরীচিকার পিছে' কবিতা থেকে চারটা লাইন বলেছিলাম-

"কোন যেন পরী চেয়ে আছে দুটি চঞ্চল চোখ তুলে!
পাগল হাওয়ায় অনিবার তার ওড়না যেতেছে দুলে!
গেথে গোলাপের মালা
তাকায়ে রয়েছে বালা....,"

যাক না সেসব কথা,তোমার মনে থাকবে কি প্রিয়ন্তী! তোমার প্রিয় সেই মন্টু ভাইয়ের দোকান, যেখানে দুজনের দেখা হয়ে ছিল?
:হুম, ঠিকই মনে আছে।
-কেন যেন...., ওহ না আমি আমার ছাত্র কে নিয়ে বের হয়েছিলাম।
তুমি কোথা থেকে যেন সামনে এসে পড়লে!
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।
মনে হয়েছিল কোনো এক রুপকথার রাজ্য থেকে চুরি হয়ে যাওয়া রাজকন্যা এসেছে আমার সামনে...!
তুমি বললে,
:কেমন আছেন কবিতা মুখস্থওয়ালা সাহেব?
-ভালো,আপনি?
:এইতো আছি,তা আমাকে দেখে কি কোনো কবিতা মনে করার ব্যর্থ চেষ্টা করেন?
-নাতো!
:হাহা মিথ্যা বলে লাভ নেই,এই ভাবে গিলে খেলে কিন্তুু সমস্যা।

পিছনে ফিরে দেখি ছাত্র আমার বিদায়,আর হাসছ তুমি। তুমি হাসতে হাসতে বললে-
:তুমি যেমন করে জীবনানন্দ দাশের চার লাইনের কবিতা আবৃত্তি করে আমার ঘুম হারাম করলে, আজ থেকে আমিও তোমার ঘুম কেড়ে নিলাম!
আমি অবাক হয়ে শুনছি তোমার কথা...!
কেন জানি মনে হল, হুমায়ুন স্যারের রুপা কি জীবন্ত হয়ে উঠল নাকি রবীন্দ্রনাথের সেই লাবন্য!
তুমি মন্টু ভাইয়ের দোকানে চা খাওয়ালে, তারপর বিদায়!যাওয়ার আগে বলে গেলে মনে পড়লে যেন এই দোকনটায় অপেক্ষায় থাকি।
কত রাত, কত দিন গেল,হিসেব করে দেখলাম,তুমি ঠিক ৪৫ দিন পর রবিবারই ঐ সময়টাতে আমার পাশে বসা। 
তারপর থেকে হাঁটতে চলা একসাথে দুজনের,কত স্বপ্ন কত ভালোবাসা...!
যেদিন বৃষ্টি হবে,নয়তো জ্যোৎস্না হবে, তোমাকে রবীন্দ্রনাথ নয়তো বঙ্কিমচন্দের উপন্যাস পড়ে শুনাতে হবে। নেশা ছিল বই পড়ার, তাও দিলে হাজার গুণ বাড়িয়ে।

মাঝে মাঝে হাত ধরে হাঁটা,গভীর রাতে ফোনে তোমার কথার মাঝে ঘুমিয়ে পড়া। ভালোবাসার খেলা যাচ্ছিল তো ভালোই,
কোথা থেকে হঠাৎ আসলে আর বললে,
:তোমার কবিতা গুলো ছি: কি বাজে!শোনো আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।আর দেখা হবে না। ভালো থেকে।
কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে চলে গেলে, চার লাইনের কবিতা বলে তো মাত্র এক রাত্রের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলাম আর তুমি তো আমার সারা জীবনের ঘুমই কেড়ে নিলে প্রিয়ন্তী!

আজও কবিতা মুখস্থ করি,জানি একদিন হঠাৎ করে আসবে। যখন খুব ক্লান্ত হয়ে যাবে, আমার কাঁধে মাথা রাখার জন্য হলেও আসবে।
তখন স্বামী না,একজন কবিতাওয়ালা বন্ধু হিসেবে চাইবে তাও জানি। তাই তো আমার কবিতা মুখস্ত করা। দুজন মিলে না হয় মৃত্যু পর্যন্ত বন্ধু হয়ে রইলাম। 
কথা তো অনেক ছিল,আজ নাহয় চুপ করে সূর্য অস্ত দেখি।
ভালোবাসলেই মিলন হবে তার যুক্তি নেই,ভালোবাসলে সারা জীবন বন্ধু হয়েও বাঁচা যায়। তাই হয়তো আমার এই অপেক্ষা...!

-রেজাউল করিম

Post a Comment

0 Comments