গল্প: প্রেমিক এবং স্বামী

 প্রেমিক এবং স্বামী


নীরা গত কালকে চলে গেছে,আমি তাকে আর ফোন দেইনি বা ডাকিনি। কি দরকার ফেরানোর? যে মেয়েটি ইয়া বড় বড় ম্যাথ সলভ করতে পারতো মিনিটের ভেতর, বিশাল বড় বড় প্রমাণ গুলোর ভুল ধরতে দিনের পর দিন পড়ে থাকতো ভার্সিটির ল্যাবে। সেই বিয়ের পর কেমন করে এমন করে? 
একবার নারী স্বাধীনতা নিয়ে কথা তুলে ছিলাম। নীরা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। তারপর গরম চোখে বলল,
" তোকে তো আমি ভালোবাসার দামে গোলাম করে রেখেছি,কই আমি পরাধীন কোথায় ?"
আমি করুন চোখে তাকিয়ে ছিলাম। সোজাসাপ্টা উচিৎ কথা বলতে ওর বুক কাঁপত না। সহজ করে বলে দিত,ভাবতোও না একবার, সামনের মানুষটা কি ভাবছে! তারপর বলা শুরু করল, "দেখো রেজা,আমি জানি এই
" নারী স্বাধীনতা " শব্দটা রাজনীতির চাল। আমার সাথে এই সব ক্যাচাল করো না। দুটা ভোট,চারটা বই অথবা পাঁচটা টাকা কামানোর ধান্ধা কে ওরা নারী স্বাধীনতা নাম দিয়েছে। স্বাধীনতা বলতে বুঝি সমস্ত দেশের স্বাধীনতা যেটা মানুষের স্বাধীনতা। কই,আমি তো দিব্বি হাঁটছি, তোমার সাথে ঘুমাচ্ছি,রাত ১২ টায় ঘরে ফিরছি। আমি "নারী " নারী কি মানুষ না? এই নারী শব্দটা কি দুর্বলতার প্রতীক? যারা নারী স্বাধীনতা বা ফ্যামিনিজম এর নাম করে চিৎকার করে, এই সব কে জুতো দিয়ে মারা উচিৎ। আফ্রিকার ওইসব নারীদের কথা কি তারা জানে? যে নারী গুলোর যোনিতে সেলাই করে রাখা হয়,যেন বিয়ের আগে যৌন মিলন করতে না পারে! কোথায়,তাদের জন্য দাঁড়ায় না কেন কেউ"?

এই নীরাই,স্বামী এবং প্রেমিকের তফাত করতে পারেনি।
বিয়ের পর বললাম চাকরি করো,উওরে সে বলল,
"আমি সন্তান পালন করবো,স্পার্টান নারীরা যুদ্ধে যেত না। তারা রাজ্য পরিচালনা করত না, তবুও তারা ছিল সব থেকে সম্মানীয়। কারণ তারা বিশ্বাস করত, তারাই তাদের পেটে ধারন করে সেই সব সন্তান, যারা পৃথিবী বা রাজ্যের রক্ষক হবে। তাহলে কেন শুধু নারী স্বাধীনতা মানে রাস্তায় নেমে মিছিল মিটিং?
নেপোলিয়ান বলেছিলেন,
" আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাকে একটা শিক্ষিত জাতি দিবো"।
মাকে রাস্তায় নেমে শিক্ষিত হতে বলেনি, বলেছিল ভবিষ্যত পৃথিবী গড়তে পারে নারী। যদি সে শিক্ষিত হয়,তার হাতেই সব। তাহলে আমি কেন রাস্তায় নামতে যাবো? আমি ঘরে বসেই, নিজের শিক্ষায় একজন বুদ্ধিজীবি, রাষ্ট্রনায়ক,প্রফেসর অথবা রাজনৈতিক নায়ক তৈরি করব।

সেই নীরাই বুঝতে চায়নি,প্রেমিক আর স্বামীর ভেতর হাজার খানেক রাস্তার ব্যবধান আছে। বৌ এবং প্রেমিকার ভেতর দিন রাত্রের পার্থক্য থাকে। 
প্রেমিক হল বাপের টাকায় চলা এক কাপুরুষ। যার জুতোর তলা ক্ষয় হবে বলে, রিক্সা ছাড়া প্রেমিকা নিয়ে ঘোরে না। প্রেমিক হল, বাপের টাকায় রেষ্টুরেন্টের বিল ভরা ছেলেটি। একবার ভালোবাসি শব্দটি শোনার জন্য পাগল প্রায় মানুষটি।

স্বামী হল ঐ লোক,যার মাথা ভর্তি চিন্তা। কেমন করে লাষ্ট প্রজেক্টের ফাইলটি জমা হবে বড় স্যারের ডেস্কে, এই মাসের বেতন থেকে কত টাকা বাবা মায়ের আর কত নিজের সংসারের? স্বামী মানে,কেমন করে স্ত্রীর ভবিষ্যত অটল থাকবে সৌন্দর্যে।

তবুও নীরা বুঝতে পারেনি স্বামী মানে এক দল বোঝার বাহারি দল।
প্রেমিকা মানে,রাণী অথবা দেবী পুরুষের চোখে। প্রেমিকা মানে অপর পৃষ্ঠার কষ্টের নাম। দিবারাত্রি প্রেমিকের জন্য কষ্ট করে যাওয়া পরিবারের বিরুদ্ধে। প্রেমিকা মানে দুঃসময়ে সার্পোট করে বীর রুপে ফিরিযে আনা যুদ্ধের মাঠে।
নীরা বুঝেছিলো তা। শুধু বুঝতে পারেনি স্ত্রী মানে একটুখানি বদলে যাওয়া। সেই পাগলা প্রেমিক থেকে এক পুরুষ প্রেমিক কে গুছিয়ে তোলা।

নীরা হয়তো ফিরবে না আর, তবে নীরা ফিরুক আর না ফিরুক। সেই নীরাকে আমি আর ডাকছিনা।
"মেয়েরা প্রেমিক এবং স্বামী দুজনের ভেতর পার্থক্য না খুঁজে প্রেমিকই খুঁজে। 
যদি স্বামীর মতো, প্রেমিকা এবং স্ত্রীর পার্থক্য করতে পারতো, তবে সব প্রেমই বিয়ের পরও প্রেমই থাকতো।"



-রেজাউল করিম

Post a Comment

0 Comments