গল্প: কবিতা

 গল্পঃ কবিতা 


-আচ্ছা মহাদেব সাহার কবিতা কেমন লাগে তোমার? 
- আসলে হয়েছে কি ,আমার না কবিতা ভালো লাগে না।
-কি আশ্চর্য!তোমার কবিতা ভালো লাগে না? তাহলে তো তুমি ন্যুনতম যোগ্য প্রেমিক হবারও যোগ্য নও!
- কি বলো এই সব তুমি! 
-শুনো,প্রেমিক হবার প্রথম শর্ত, তোমাকে কবিতা প্রেমিক হতে হবে। তাহলে ভেবে দেখতে পারি!
- কবিতা আর প্রেম এক হল কি করে শুনি? আর কবিতা ছাড়া বুঝি প্রেম হয় না?
- প্রেমের স্রষ্টা কবিতা,গ্রীকের দেবীরা যেমন না থাকলে ট্রয় যুদ্ধ পড়ে আমরা ক্লান্ত হতাম। ঠিক তেমনি প্রেমে কবিতা না থাকলে এই প্রেম জিনিস হারিয়ে যেত।
- শুনো মেয়ে,তুমি কবিতার বৌ হতে পারো। তাই এমন যা তা বলছো!
- কি বললে তুমি!
- না কিছুু বলিনি তো,বলো কোন কবিতা পড়ে শোনাতে হবে? আর কবে?
- হুম,তাহলে মহাদেব সাহার নির্বাচিত ২শ কবিতার বইটা খুলবে।ঠিক ৪৭ তম পৃষ্টার ৫ নম্বর লিরিক্সটা মুখস্থ করে আসবে ,আগামী বার যখন দেখা হবে শোনাবে আমায়। তখন যদি মনটা গলে,গললেও গলতে পারে। তোমার নরম কন্ঠ যদি ভালো করে ডাকে ...
- আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর,বহু দিন চলে গেল তোমায় দেখি না। আমি,এই আমি বিশ্বাস করো,মহাদেব সাহার যদি হাজার খানেক কবিতা থাকতো,তবুও মুখস্থ করে ফেলতাম! শুধু তোমায় এক নজর দেখতে। 
আজকাল নিজে নিজেই আবৃত্তি করে ফিরি!

" তোমার বিষণ্ন মুখ দেখে মনে হয়,
সব ফুল ঝরে গেছে
পৃথিবীতে বড়ো দুঃসময়!"

তোমার সেই কবিকে তো ভালোবেসেছি।তার সাথে শুরু হয়েছে কবিতা প্রেমিক হয়ে ওঠার যুদ্ধ। তোমাকে কবিতা শোনাবো বলে,এখন কবি ফরেষ্ট থেকেও ধার করে কবিতা পড়ি।আমি শুদ্ধতম প্রেমিক হতে যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রিয়তমা। তবে তুমি শুধু প্রেমিকা হতে পারলে না।
তাই মাঝে মাঝে তোমার কবি সুনীলের কাছেও ঘুরে আসি।

""বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছি
দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম
তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে-কোনো নারী।""

মাঝে মাঝে মনে হয়,আসলে কোনো নারীই বুঝি কথা রাখে না? নাকি শুধু তুমিই রাখোনি?

সেদিন সিটি মার্কেট থেকে বের হবার সময়, তোমার হাস্যজ্জ্বোল মুখটা দেখে প্রাণটা ভরে গেল,পরক্ষণেই তোমার হাতের ওপর বিশাল পাহাড় সমান হাতটা দেখে মনটা কেঁদে উঠল। বরুণারা শুধু সুখী হতে জানে,এরা কি একটু কাঁদতেও জানে না?

জীবনানন্দের কথাই ধরো না,না খেতে পেয়ে মরল বেচারা,আজ হাজার মানুষ তাঁর বই বিক্রি করে বাঁচে। তখন একটা নারীও বুঝি তার জন্য হাহাকার করে এগিয়ে আসতে পারেনি? অন্তত প্রেমিকা না হোক,বন্ধু হিসেবে দুটা টাকা দিয়ে বলতে পারেনি?কবি তুমি বেঁচে থাকো!

আমার চুলে পাঁকন ধরে গেছে,গত ২১শে বই মেলায় গেলাম। সেই ঘুরে ফিরে একই স্টলে গেলাম যদি তোমার দেখা পাই ,পেয়েছিও বটে। তোমার কত সুন্দর দুটি মেয়ে হয়েছে প্রজাপতির মত,যেন ডানা মেলে উড়ছে ওরা! আমি ছুঁতে গিয়েও পারিনি ছুঁতে।

কি করলে তুমি আমায়?এক মহাকালের কষ্ট দিয়ে সামান্য দুটা কবিতা ধরিয়ে দিয়ে বললে,"ভালো থাকো আকাশ নিয়ে।এখানে মেঘ জমবে বৃষ্টি হবে,পাহাড় বেয়ে ঝড়না নেমে আসবে! তুমি ভালো থেকো"।

আজ বড্ড হিংসে হয়,তুমি কি আমায় ভালো থাকতে বলে নিজেই বড্ড ভালো আছো? 

যেদিন শেষ বইমেলা হল,পেছন থেকে শুনলাম আজকাল নতুন কবিদের রোমান্টিক কবিতার বইও নাকি তোমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে আছে। কই আমার কবিতার খাতায়,এত বিশাল একটা বুক মেলে আছে তুমি তো ফিরে দেখো না! নাকি আমায় তোমার হিংসে হয়? 

তোমার দেখানো পথেই আছি প্রিয়তমা। প্রেমিকা আমার,তুমি আসবে অন্তত একদিন হলেও এসো। তোমায় কবিতা শোনাবো। যে কবিতা প্রেমিকদের বাঁচার সম্বল,
কাঁদিয়েছে প্রেমিকদের...
এসো তবে একদিন?
জয় গোস্বামীর কবিতাটা মনে থাকে যেন, সেদিন তোমার ..!

"— ‘সে যদি তোমাকে অগ্নিতে ফেলে মারে?’
বিনা চেষ্টায় মরে যাব একেবারে

— ‘সে যদি তোমাকে মেঘে দেয় উত্থান?’
বৃষ্টিতে, আমি বৃষ্টিতে খানখান

— ‘সে যদি তোমাকে পিষে করে ধুলোবালি?’
পথ থেকে পথে উড়ে উড়ে যাব খালি

— ‘উড়বে?– আচ্ছা, ছিঁড়ে দেয় যদি পাখা?’
পড়তে পড়তে ধরে নেব ওর শাখা

— ‘যদি শাখা থেকে নীচে ফেলে দেয় তোকে?’
কী আর করব? জড়িয়ে ধরব ওকেই

বলো কী বলব, আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও?
— ‘যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!’



-রেজাউল করিম

Post a Comment

0 Comments