গল্প: কবি ও আত্মহত্যা
-এই নীরা...
শোনো,
"তারপর,তারপর তুমি হেলতেদুলতে আসছিলে আমার সামনে। ওই যে আর্কিটেকচার এর ভাষায় বলে ফ্রন্ট ভিউ। অদ্ভুত, তোমার চুল উড়ছে,সাদা ডাবল এক্সেল টিশার্ট টা! "
তোমাকে একটা মৃত মানুষের গল্প শোনাবো?নয়তো বা এবরশন এর গল্পও বলতে পারি।
তুমি হাসতে হাসতে বললে,
"রেজার বাচ্চা,তোর কাছে ভালো কিছু নেই? মৃত্যু,ঈশ্বর,হতাশা এবং আত্মহত্যা ছাড়া!
-নীরা....!
:ঠিক আছে শোনাও।
-চোখে অন্ধত্বের কাপড় পড়ে নাও আগে।
:না,আমি কেন পড়ব?
-কারণ তোমার হৃদয় খোলা থাকবে তবে।মাথা খাটাতে হবে না। নারী শুরুতে আবেগ নয়,হিসেবে ভুল করে।
:ওহ নো,তুমি বলতে চাচ্ছ,উইম্যানস আর ফাকিং.. "
-ওহ, না নীরা। কিছু বলতে চাচ্ছি না। ইউ আর সো ওয়সাম, কিউট গার্ল।এত তাড়াতাড়ি রাগছ কেন?
:থাক আর পাম মারতে হবে না। বলো কি বলবে?
-কথা বলতে ইচ্ছে হল তাই।
আমি ফিক করে হেসে দিলাম। তোমায় দেখতে যা লাগল না!টমেটোর মতো হয়ে গেল গাল গুলো,নাকটা লাল টকটকে মরিচের মত!
আমি পেছন থেকে তাকিয়েই রইলাম। যেন জ্যান্ত একটা কবিতা হেঁটে যাচ্ছে। হুট করে পেছনে ফিরলে। দৌড়ে এসে হাতটা ধরে বললে,
"ভালোবাসতে কোন বাহানা লাগে না,ইউ ইডিয়েট ইললিটেরেট ম্যান। আই ডোন্ট ফাক ইউর, সিলি টক। ইফ ইউ লাভ মি,দেন শো মি। দ্যাটস ইনাফ ফরম মি"।
তারপর এই অসভ্যতার ভাষাটা ছাড়লে,যে ভাষাকে পুঁজি করে সমস্ত পৃথিবী নোংরামীতে ভেসে যাচ্ছে স্বর্গে। যদিও তোমায় আজও স্বর্গ নিয়ে আফসোস করতে দেখিনি।খুব সুন্দর করে,খাঁটি বাংলা ভাষায় বললে,
"যদিও আমি,বড় ঘরের বেশ্যা।তবুও তুমি যদি ভালোবেসে নিয়ে যেতে পারো নরকের দরজায়,আমি তাতেও রাজি। তবুও মুক্ত করো এই পচে যাওয়া শরীরে আটকে থাকা হাওয়াটাকে। বিশ্বাস করো,পৃথিবী আমার দেহ স্পর্শ করেছে,কখনো হৃদয়ের একটা নীড়ও কুড়াতে পারেনি।"
তারপর বিরতি দিয়ে হাসতে হাসতে বললে,
"তুমি স্পর্শ করলেই হল,আমি ভেসে যাই স্বর্গের ঠিক দ্বারপ্রান্তে। একবার আমায় মুক্ত করো। এই দেহের সাথে হৃদয়েরও তো বাঁচতে হয় রেজা"।
আমি জানি না,কি ছিল তোমার চোখে। আমি একজন কবি। হ্যাঁ আমি একজন বাংলাদেশের কবি।
যে কবিরা শিখিয়ে গেছে,বেশ্যাদের লাল শাড়ি,লাল টিপ আর রাত্রে আঁধারে পাওয়া যায়। এরা নরকের নষ্টা। তবুও কখনো বলেনি,স্বর্গেরও তো হুর হয়।তাহলে স্বর্গের হুর!হাসি পায় খুব। আমি কিছু বলতে চাইনা,আমার অগ্রজ কবিরা আর স্বর্গবাসী কবিদের আমি সম্মান করি।
আমি এখন ভালোবেসে বসেছি এক বেশ্যাকে। আমার পূর্ববর্তী কবিরা কি দেখছেন আমার এই লীলা?দেখে থাকলেও ক্ষমা প্রার্থী ।
-নীরা.. নীরা
না, আমি পারিনি নীরার হাত ধরে রোড পার হয়ে স্বর্গে যেতে।না পারলেও নরকের দ্বার প্রান্তে ঠিক নিয়ে গিয়েছিলাম।
একটা নাইন এমএম বুলেট, ঠিক নীরার বুকের ভেতর দিয়ে সমুদ্র তৈরি করে বলে দিয়ে গিয়েছিল আমায়,
"এই সভ্য নগরীর আলোতে বেশ্যাদের ঘর হয়না, আমরা এই পৃথিবীর রাজা।কবি তোমরা দূর হও,ভালোবাসা সব জায়গায় খুঁজতে নেই। কারণ তোমাদের ঈশ্বরও সব জায়গায় নাক গলায় না "।
নীরা বেঁচে ফেরেনি।
আমি কবি,আমি কলেজ গেট হয়ে,হাইওয়েতে ঘুরি। রাস্তায় মাঝে মাঝে দু একজন থেকে সিগারেট চেয়ে নেই।
তবুও কবিদের লজ্জা হয়না,কবিদের লজ্জা থাকতে নেই। কবিদের লজ্জা নিয়ে ভাবতে নেই,ভাবতে গেলে অনুভূতির খাতায় লেখা আসত না।
"আমি যেবার প্রথম মায়ের প্রেমে পড়েছিলাম,সেই কথা কি বলেছিলাম?
অবশ্যই বলেছি।
রাস্তায় সোডিয়ামের আলো জ্বলছে,ওহ! চিটাং থেকে যে সব বড় বড় গাড়ি আসে,এদের হেড লাইট গুলো চোখে বড় যন্ত্রনা করে।
নীরা দাঁড়াও,আমিও আসছি।জানোই তো,আমরা কবিরা একটু পাগল কিসিমের।দুটো টান দিয়ে নেই,পৃথিবীতে অমৃত স্বাদের জিনিস হল সিগারেট। স্বর্গে পাবো কিনা জানি না,দুটা টান দিয়ে আসছি।
আলো নিবে যাচ্ছে,নীরাকে এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
একটা সাদা ডাবল এক্সেল টিশার্ট,শার্টের সামনে লেখা " গড উইল বি লাভ ইউ" চুল গুলো এলোমেলো,ঠোঁট লাল টকটকে চওড়া।যেন চুম্বকের মতো আর্কষণ করছে।
শালার কবি আমি।এখন বুঝি,কবিরা কেন সব ছেড়ে নীরাদের পেছনে পড়েছে।
ভালো থেকো সভ্য পৃথিবী। মাকে ভালোবাসা জানিও আমার।
-রেজাউল করিম
0 Comments